শালবনি, 7 নভেম্বর: এ যেন ঠিক বলিউডের সিনেমা 'প্যাডম্যান' ৷ সেখানে যেমন কাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল তা একেবারে বাস্তবে রূপ পেল এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে ৷ বিএসসি-তে গ্রাজুয়েট রিনিতা সেন, শম্পা মাহাতো, কার্তিক বিশ্বাস, মনিকা মুখোপাধ্যায়, সৌরভ চক্রবর্তী ও ভজহরি সিং এলাকায় দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন। দেখছেন উন্নতি হওয়ার নতুন সূর্যের আলো। প্রত্যন্ত জঙ্গলমহল অধ্যুষিত চ্যাংসোলের যশপুর এলাকাকে বেছে নিয়েছেন এই ছেলে-মেয়েরা (Real Life Padman is Helping Women)।
সমগ্র এলাকা এসসি ও এসটি অন্তর্ভুক্ত কালিন্দী সমাজের বাস। এই সমাজের মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে হাজির হয়েছেন তাঁরা ৷ এলাকার মানুষদের যেমন সচেতন করছেন তেমনই বাড়ি বাড়ি বিলি করছেন ন্যাপকিন (Menstrual Pad)। এরই সঙ্গে অভিনয় নাটক এবং বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মধ্য দিয়ে তাঁরা 'কাপড়'-ব্যবহার থেকে সৃষ্টি হওয়া রোগ সম্বন্ধে সচেতন করছেন ৷ পাশাপাশি তা থেকে বাঁচাতে পারে যে এই ন্যাপকিন, তা নিয়েও অবগত করছেন তরুণ-তরুণীরা ৷ তাই ন্যাপকিন বিলি করছেন, বিনে পয়সায়।
আরও পড়ুন: মেয়েদের নিলাম ! ভিলওয়াড়ায় প্রতিনিধিদল পাঠাল মহিলা কমিশন
মহিলাদের ঋতুস্বাবের এই ক'টা দিন একটু সচেতনভাবে থাকতে হয়। বিশেষ করে জঙ্গলমহল অধ্যুষিত মহিলারা এই ক'টা দিন কুসংস্কারের ভয়ে এবং পরিবারগত ও গ্রামের চাপে কষ্ট ভোগ করেন। সঠিক জ্ঞান এবং সঠিক ন্যাপকিনের অভাবে তাঁরা আরও কঠিন থেকে কঠিনতম রোগের আক্রান্ত হন। না থাকে ন্যাপকিন কেনার টাকা, না থাকে সচেতনতা যার ফলে, অকালেই ঝরে যায় বহু মহিলার জীবন। তাই এই উঠতি ছেলেমেয়েরা ঠিক বলিউড সিনেমা 'প্যাডম্যান'-এর অক্ষয় কুমারের (Akshay Kumar) মতনই হাজির হয়েছেন এলাকায়।
এলাকার মানুষদের সচেতন করলেন এবং তাঁদের হাতে তুলে দিলেন ন্যাপকিন। যাতে তাঁরা নোংরা কাপড় ব্যবহার না করেন এবং জীবন বাঁচাতে সফল হন। এরই সঙ্গে তাঁরা যাতে এই ন্যাপকিন বছরের পর বছর, মাসের পর মাস ব্যবহার করতে পারেন এবং বিনে পয়সায় পেতেও পারেন তাঁর দায়িত্বও নিলেন। এই তরুণ-তরুণীরা এলাকায় ন্যাপকিন বিক্রি করে নিজেরা সাবলম্বী সঙ্গে সচেতনতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন 'ফর গুড' নামক সংস্থার হাত ধরে।
আরও পড়ুন: ঝাড়খণ্ডের গর্ভবতী মা ও শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য বিক্রি হচ্ছে গোখাদ্য হিসাবে
প্রসঙ্গত, 2018 সালে 'ফর গুড' নামক একটি সংস্থা চালু করেন 6 জন তরুণ তরুণী। এই সংস্থা 6 জন দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা 160 জন ৷ সংস্থা থেকে রিনিতা সেন বলেন, "সমাজের এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা কেউ ভাবে না। বিশেষ করে মেয়েদের এই মাসিকের সময়টা ৷ সচেতনতা ও কুসংস্কারের ভয়ে গ্রামের মহিলারা প্যাড ব্যবহার করেন না। তাই তাঁদের সারাবছর প্যাড দিয়ে সাহায্যের জন্য আমাদের এই প্রয়াস। আমরা শুধু তাঁদের সচেতনই করব তা না সঙ্গে আগামিদিনে তাঁরা যাতে সাবলম্বী হতে পারেন তার ব্যবস্থা করব। আগামিদিনে এই জঙ্গল মহলের প্রত্যন্ত এলাকায় ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানোরও প্ল্যান রয়েছে আমাদের। আমরা প্রায় কয়েকমাস ধরেই প্রায় 80 শতাংশ মহিলাকে সচেতন করে তুলেছি সঙ্গে তাঁদের হাতে বিনে পয়সায় প্যাড তুলে দেওয়া হয়েছে।"
তবে এই প্যাড পেয়ে খুশি গ্রামের কিশোরী থেকে মহিলারা। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রথম প্রথম লজ্জা পেতেন। তাছাড়া এই মাসিকের দিনগুলিতে কাপড় ব্যবহার করায় খুব সমস্যা হয় তাঁদের ৷ এছাড়াও এই প্যাড কেনার সামর্থ নেই তাঁদের। তাই এই ভাই-বোনেরা বাড়ি বাড়ি প্যাড পৌঁছে দেওয়ায় উপকার হয়েছে। এবার থেকে তাঁরাও এলাকাবাসীদের সচেতন করবেন ।
আরও পড়ুন: গর্ভপাত আইনের আওতায় বৈবাহিক ধর্ষণও অপরাধ, জানাল শীর্ষ আদালত