মেদিনীপুর, 5 জুলাই : করোনা আবহে বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে বালি খাদান থেকে বালি উত্তোলন এবং অবৈধভাবে বালি সঞ্চয় রুখতে অভিযানে নেমেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। সোমবার গুড়গুড়ি পাল, গড়বেতা-সহ একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি আর্থ রিমুভার-সহ 34টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে তারা ৷ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে 23 জনকে ৷
আরও পড়ুন : অবৈধ বালি উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত আড়ষা-বেলডি ব্রিজ
লকডাউন পরিস্থিতিতেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বারবার বালি চুরির অভিযোগ উঠেছে ৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, করোনা আবহে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই বালি খাদানগুলিতে লুঠ চালাচ্ছে মাফিয়ারা ৷ খাদান থেকে চুরি করা বালি রাতারাতি পাচার হয়ে যাচ্ছে ভিন রাজ্যে ৷ মোটা মুনাফার লোভেই দিনের পর দিন এই কুকীর্তি চালিয়ে যাচ্ছে বালি মাফিয়ারা ৷ এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে দাবি এলাকাবাসীর ৷
তবে শেষমেশ ঘুম ভেঙেছে পুলিশ প্রশাসনের ৷ বালি চোর ধরতে সোমবার সকাল থেকেই শুরু হয় অভিযান ৷ কয়েকদিন আগেই গুড়গুড়ি পাল থানার অন্তর্গত বিভিন্ন খাদানে অভিযান চালিয়েছিল জেলা পুলিশ ৷ এদিন সেই সব খাদান থেকেই সাতটি বালি পরিবহণের গাড়ি ও আর্থ রিমুভার আটক করা হয় ৷ গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে ৷ এরপর গড়বেতার বালি খাদানগুলিতেও অভিযান চালায় জেলা পুলিশ ৷ সেখানেও বালির গাড়ি, আর্থ রিমুভার আটক করা হয় ৷ সবমিলিয়ে এদিন মোট 34টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে জেলা পুলিশ ৷ গ্রেফতারের সংখ্যা 23 ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বালি লুঠ রুখতে এখন থেকে লাগাতার এই ধরনের অভিযান চলবে ৷
আরও পড়ুন : কাঁকসায় বেআইনি বালি বোঝাই 14 লরি আটক, গ্রেফতার 8
এদিনের অভিযানের পর সব মিলিয়ে 26টি মামলা করেছে পুলিশ ৷ বালি পাচার চক্রকে সমূলে উৎখাত করতে এই মামলাগুলির তদন্ত চলছে ৷ এর পাশাপাশি, পাশের জেলা ঝাড়গ্রাম থেকে আসা 10টি বালিবোঝাই গাড়িকেও আটক করা হয়েছে ৷ তাদের বিরুদ্ধে ওভারলোডিংয়ের অভিযোগ রয়েছে ৷
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ইদানীং স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে বালি খাদানগুলি থেকে বালি লুঠ ও পাচারের অভিযোগ লাগাতার বাড়ছিল ৷ সেই কারণেই এদিন জেলার নানা প্রান্তে অভিযান চালান হয় ৷ এছাড়া, যে রুটগুলি দিয়ে বালিবোঝাই গাড়ি যাতায়াত করে, সেই রুটগুলির বিভিন্ন অংশে নাকাচেকিংয়ের জন্য পাঁচটি পোস্ট তৈরি করা হয়েছে ৷ বালির পাচার রুখতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ৷
আরও পড়ুন : বালি পাচারের অভিযোগে ৫টি বালিবোঝাই ট্রাক্টর আটক করা হল দ্বারকেশ্বর নদীতে
সম্প্রতি রাজ্য়ের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও (Manas Bhunia) জেলার বালি খাদানগুলিতে মাফিয়ারাজ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ৷ সরাসরি এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগও করেন তিনি ৷ ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, মন্ত্রীর এই হস্তক্ষেপেই নড়েচড়ে বসেছে জেলার পুলিশ প্রশাসন ৷