সবং, 20 জানুয়ারি : মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে শুরু সবং-পটাশপুরে অনুষ্ঠিত সাত দিনের হয় তুলসী চারার মেলা । 500 বছরেরও বেশি পুরোনো এই মেলা । শুধু তাই নয়, তুলসী চারার মেলা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও প্রাচীন মেলা । পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে নদীবক্ষে রয়েছে তুলসী মন্দির । প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে তুলসী চারার মেলা শুরু হয় । এই তুলসী মন্দিরকে কেন্দ্র করেই এই মেলার নামকরণ-তুলসী চারার মেলা ।
পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে বাকসিদ্ধ বৈষ্ণব শ্রী শ্রী গোকুলানন্দ গোস্বামী বৈষ্ণবচার্যরূপের সমাধি মন্দির রয়েছে l বয়স্কদের কথায়, গোকুলানন্দ সবং-এর কোলন্দা গ্রামের নামকরা জমিদার পরমানন্দ ভুঁইঞার ভান্ডারি ছিলেন । বেশিরভাগ সময়ই সাধন ভজনে ব্যস্ত থাকতেন । পরমানন্দের ছেলে বিপ্রপ্রসাদ গোকুলানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
কথিত আছে, গোকুলানন্দ গোস্বামী পৌষ সংক্রান্তিতে রাত 12 টা নাগাদ নদীর মাঝখানে, তাঁর যোগমঞ্চে সাধনা করতে করতে সমাধিপ্রাপ্ত হন । দেহরক্ষার আগে গোকুলানন্দ গোস্বামী তাঁর শিষ্য বিপ্রপ্রসাদকে ডেকে বলে যান পৌষ সংক্রান্তিতে তুলসীমঞ্চে তিনমুঠো মাটি দিলে সবার মনস্কামনা পূরণ হবে ।
এরপর থেকেই পৌষ সংক্রান্তির ভোরে পুণ্যস্নান করে গোকুলানন্দ গোস্বামীর তুলসী মঞ্চে কেলেঘাই নদী থেকে তিন মুঠো মাটি তুলে দান করেন । দুই মেদিনীপুরের হাজার হাজার মানুষ তুলসী মঞ্চে মাটি দিয়ে পূজা নিবেদন করেন । সম্প্রতি , কেলেঘাই নদীর বাঁধের সংস্কার হয়েছে । এর ফলে মেলার আয়তনও বেড়েছে । বর্তমানে প্রায় 13-14 একর জায়গা জুড়ে মেলা বসে । অতীতে 1 দিনের জন্য মেলা বসত । বর্তমানে মেলা চলে 7 দিন ।
তুলসী চারার মেলার আর একটি বিশেষত্ব হল তুলো । দীর্ঘদিন ধরেই থেকেই এই মেলায় পসরা সাজিয়ে আসছেন তুলো ব্যবসায়ীরা । নানা ধরনের তুলো কেনাবেচা হয় এই মেলাতে । এছাড়াও এই মেলায় পাওয়া যায় ভাবসংগীত ও লোকসংগীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র । সময়ের সাথে আকারে ও বহরে বেড়েছে তুলসীচারার মেলা । একে একে মেলায় যোগ হয়েছে মাটির সামগ্রী থেক সবজি , মাছ ও সবং-পটাশপুরের পরিচিত মাদুর এবং বাগমারির শঙ্খ , বিভিন্ন মিষ্টির পসরা ।