চন্দ্রকোনা, 1 সেপ্টেম্বর: আত্মহত্যার চেষ্টা করে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন তিথি ৷ কিন্তু শেষরক্ষা হল না ৷ 17 দিনের লড়াই শেষে মৃত্যুর কাছে হার স্বীকার তিথির (College Girl Died by Suicide in Chandrakona)। কিন্তু তিথি কেন বিষ খেলেন ? পরিবার ও এলাকার মানুষের অভিযোগ স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের (Student Credit Card) সুবিধা না-পেয়ে এই পথ বেছে নেন এই কলেজ ছাত্রী ৷ গত 14 অগস্ট বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন ৷ বারবার প্রশাসনের কাছে গিয়েছেন, ব্যাংকের কাছে গিয়েছেন তিথি ৷ তবু মেলেনি স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ৷
উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার 12 নম্বর ওয়ার্ডের ভেয়েরবাজার এলাকার জয়দেব দলুই ও রিঙ্কু দলুইয়ের একমাত্র মেয়ে তিথি দলুই। তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করার পর ব্যাঙ্গালোরে (Bangalore)একটি নার্সিং কলেজে ভর্তি হন। তিনি যখন নার্সিং কলেজে ভর্তি হন সেই সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয় পড়াশেনার খরচ পড়বে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। ভর্তির সময় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তিথি প্রথমে এক লক্ষ টাকা জমা দেন ও কলেজে ক্লাস শুরু করেন। 'স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড'-এ আবেদন করার কারণে তিথি ও তাঁর বাবা, মা ভেবেছিলেন তাঁরা ব্যাংকের মাধ্যমে লোন পেয়ে যাবেন। কিন্তু সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি জমা দিলেও একাধিকবার ব্যাংক ঘুরেও লোন না পেয়ে মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি ৷
আরও পড়ুন: জনসংযোগে ঘাটতি, দক্ষিণ দিনাজপুরে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড পেতে নামমাত্র আবেদন জমা
তিথির মা রিঙ্কু দলুই বলেন, "নবান্ন (Nabanna)থেকে শুরু করে বিকাশ ভবন একাধিকবার আমার মেয়ে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য গিয়েছিল। এমনকী ব্যাংকেও গিয়েছি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, দ্বিতীয় কিস্তির টাকা চেয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ । তাদের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, পরীক্ষার আগেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দিয়ে দিতে হবে তা না-হলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না।"
আর কলেজের সেই নিয়ম অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করার অর্থ সংগ্রহ করতে পারেনি পরিবার । ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছে তিথিকে। তাই মানসিক অবসাদে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে পরিবারের দাবি। গত 14 অগস্ট রবিবার রাতে তিথি বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাঁকে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিতও করা হয় । সেই থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি ছিলেন ৷ প্রতিদিন একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছিলেন ৷ প্রায় 17 দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হার মানলেন তিথি ৷
আরও পড়ুন: স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ঋণ মঞ্জুর মাত্র 16 শতাংশের
এলাকার মানুষের দাবি, যেখানে সরকার 'স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড' চালু করেছে সেখানে কেন ছাত্রছাত্রীরা এর সুবিধা পাবে না ৷ যদিও এ বিষয়ে চন্দ্রকোনা স্টেট ব্যাংক ম্যানেজার (Manager of SBI) সান্টু কুমারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "তিথির তথ্য সংক্রান্ত কিছু ত্রুটি থাকার জন্যই 'স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড'-এর সুবিধা দেওয়া হয়নি। তিথির অ্যাডমিশন লেটার অন্য কলেজের আর ফিজ স্ট্রাকচার অন্য কলেজের ছিল ৷ তাতেই সমস্যা হয়।"
তিথির বাবা জয়দেব মণ্ডল এ বিষয়ে বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিযোগ জানাব। লোন না পেয়ে মানসিক অবসাদেই আত্মঘাতী হয়েছে মেয়ে। মৃত্যুর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিততে পারল না ৷ এর জন্য সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী সরকার ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।" যদিও তিথির মৃত্যুতে ব্যাংককেই দোষারোপ করেছে শাসক দল। তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন,"ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি মানবিক হতে হবে। যদি তারা মানবিক হত তাহলে হয়ত অকালে তিথির প্রাণ যেত না।" পাশাপাশি তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্লক আধিকারিক এবং মহকুমা আধিকারিককে এ বিষয়ে দেখার আবেদন করেছেন। পালটা তিথির মৃত্যুতে শাসকদলের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছে বিজেপি। জেলা বিজেপির সভাপতি তাপস মিশ্র বলেন, "স্টুডেন্ট কার্ডের নামে মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাই অকালে চলে গেল এক তরতাজা প্রাণ।"
আরও পড়ুন: পড়াশোনার চাপ আর নিতে পারলাম না, বন্ধুদের মেসেজ করে আত্মঘাতী দ্বাদশের পড়ুয়া