মেদিনীপুর, 13 মে : 50 দিন হলে লকডাউনের । এরপরেও লকডাউন উঠবে কি না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই । বন্ধ ইটভাটা । কাজ নেই । আস্তে আস্তে সঞ্চয়ের টাকা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে । তাই বাড়ি ফিরতে উদ্যোগী হলেন পুরুলিয়ার মানবাজারের 15 জন শ্রমিক । প্রশাসনের সাহায্য পাওয়া যায়নি । তাই নিজেদের সঞ্চিত টাকায় নতুন সাইকেল কেনেন তাঁরা । রওনা হন বাড়ির উদ্দেশে । অনেকটা রাস্তা চলতে হবে । তাই ভোর ভোর বেরিয়ে পড়েছেন ।
দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন চলছে । বন্ধ ইটভাটাগুলি । ইটভাটায় কর্মরত পুরুলিয়ার মানবাজারের 15 জন শ্রমিকের অবস্থা বেহাল । পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদার একটি ইটভাটায় তাঁরা কাজ করতে এসেছিলেন । লকডাউনের আগে কাজ চলছিল । কিন্তু এখন ভাটা বন্ধ । সঞ্চিত টাকা শেষ হওয়ার মুখে । ভাটার মালিক প্রথমে সাহায্য করেন । কিন্তু পরের দিকে আর সাহায্য পাননি তাঁরা । বারবার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি । তাই কোলে বাচ্চা নিয়ে সমস্ত জিনিসপত্র বেঁধে সাইকেলে বেলদা থেকে বেরিয়ে পড়েন । রাস্তায় রোদে-গরমে ক্লান্ত হয়ে গেলে একটু জল বা একটু খাবার, আবার সাইকেল চালানো শুরু করছেন । মেদিনীপুরের অন্তর্গত ধর্মা এলাকায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তাঁরা । কারণ এখনও অনেকটা রাস্তা বাকি ।
শ্রমিকদের মধ্যে বিদ্যাধর ও হরি টুডুরা বলেন, “দীর্ঘ লকডাউনে বন্ধ ইটভাটা । এই অবস্থায় সাহায্য করতে পারেনি ভাটার মালিক । ফলে আমরা অসহায় বোধ করি । খাবারের অনিশ্চয়তা দেখা দেয় । নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে আমরা কিছুদিন খাওয়া দাওয়া চালিয়ে যাচ্ছিলাম । বাড়ি ফেরার জন্য স্থানীয় থানায় আবেদন করি । কিন্তু বারবার আবেদন করেও কোনও উত্তর পাইনি । তাই আমরা নিজেদের জমানো টাকায় নতুন সাইকেল কিনে বাড়ির ফেরার জন্য বেরিয়েছি । শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারব কি না জানি না । তবে বাড়ির লোকজনদের জন্য অবশ্যই মন আকুল হয়ে উঠেছে ।”
অপরদিকে তিন বছরের বাচ্চা কোলে নিয়ে বৈশাখি হাঁসদা বলেন, “দীর্ঘদিন ভাটা বন্ধ । খাবার পাচ্ছিলাম না। এই অবস্থায় টাকা শেষের মুখে । তাই বাড়ি ফেরা ছাড়া আমাদের আর কোনও পথ ছিল না । কিন্তু প্রশাসনের সাহায্য না পেয়ে আমরা নিজেদের উদ্যোগে সাইকেল কিনে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছি । বাড়িতে স্বামী, ছেলে রয়েছে ।”