দাঁতন, 27 মে : ভিনরাজ্য থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনা, মৃত্যু, অনাহার, পায়ের তলা খুইয়ে ফেলা, বাঁচানো রুটিতে রক্তের দাগ- অনেক দৃশ্যই সামনে এসেছে। হেঁটে ফিরতে গিয়ে 12 বছরের নাবালিকার মৃত্যুও দেখেছে দেশ । কিন্তু এত খারাপ খবরের মাঝেও ভালো খবর থাকে । আর সেই ভালো খবরই এল এক ভিনরাজ্যের শ্রমিকের হাত ধরে । নাকা চেকিংয়ের সময় বাংলা-ওড়িশা সীমান্তে এক শ্রমিকের কোলে জন্ম নিল ফুটফুটে শিশু ।
সাত মাস আগে দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড় থেকে শওহরের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশে কাজে গেছিলেন নাজিরা বিবি । সেখানে ইট ভাঁটায় দু'জনেই কাজ করতেন । সবই ঠিকঠাক চলছিল । সংসারে নতুন সদস্য আসার অপেক্ষায় ভালোই ছিলেন দু'জনে । কিন্তু বছরের শুরুতে কোরোনা সংক্রমণ ছড়াতেই বদলে যায় জীবন । আর পাঁচটা দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিকদের মতো কাজ যায় এই দু'জনেরও । লকডাউন খোলার অপেক্ষায় থাকলেও লাভ হয় না । লকডাউনের সময়সীমা ক্রমেই বাড়তে থাকে । অগত্যা হেঁটেই ফেরার সিদ্ধান্ত নেন দু'জনে । অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে রওনা দিয়ে কিছুটা রাস্তা লরির সাহায্যও মেলে । তাঁরা এসে পৌঁছান ওড়িশা- বাংলা সীমান্তে । সেখানে জোরকদমে চলছে নাকা চেকিং ।
নাকা চেকিংয়ের লাইনে দাঁড়িয়েই প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় । পরিস্থিতি বুঝে নাজিরা বিবিকে তড়িঘড়ি দাঁতন গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানেই তিনি একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন । মা ও শিশু দু'জনেই সুস্থ রয়েছে বলে জানা গেছে ।
গতকাল সন্ধেয় দাঁতন গ্রামীণ হাসপাতালে তাদের দেখতে যান খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ, বেলদার SDPO সুমনকান্তি ঘোষসহ অন্যান্য পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা । তাঁরা নাজিরা বিবির পরিবারের হাতে দু'হাজার টাকা তুলে দেন । দেওয়া হয় বেবি ফুড ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীও । তাদের সুস্থ হয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাসও দেন তাঁরা । পুলিশের এমন ভূমিকায় খুশি শ্রমিক পরিবারটি ।