মেদিনীপুর, 15 নভেম্বর: বর্তমান সময় হল ডিজিটালের যুগ (digital era) ৷ আর এরই মাঝে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে বইয়ের চাহিদা ৷ লেখক, কবি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা, বাকি বিশ্বের সঙ্গে ভারতে এই বই ব্যবসায় আর্থিক মন্দার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন ডিজিটাল মাধ্যমকেই । এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্মের বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে পড়বে ৷ বই কী জিনিস, তা জানবেই না পড়ুয়ারা ।
একসময় এমন ছিল, নতুন বইয়ের গন্ধ পেতে ছেলেমেয়েরা হাজির হতো বইয়ের দোকানে । উৎসব অনুষ্ঠান তো বটেই, বিয়ে বাড়িতেও উপহার দেওয়া হতো বই ৷ যা নবদম্পতির কাছে অন্যান্য উপহারের থেকে অনেক বেশি দামি হয়ে উঠত ৷
শুধু উৎসব অনুষ্ঠানেও নয়, অনেকের ছোটবেলাও কেটেছে বিভিন্ন লেখকের হরেকরকমের বই পড়ে ৷ তার মধ্যে থাকতো গল্প, হাস্যকৌতুক-সহ, ক্যুইজের বইও ৷ আগেকারের দিনে মা-মাসিমারা তাদের সন্তানদের ঘুম পাড়াতেন বই পড়ে অথবা কবিতা শুনিয়ে। কখনও কখনও ঠাকুমারা ভূতের গল্পের বই পড়ে শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছেন নাতি-নাতনিদের ।
এইভাবেই নস্টালজিয়ার বই মানুষের মনে দাগ কেটেছে বছরের পর বছর । কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল যুগে ইতিমধ্যে 4জি পেরিয়ে 5 জিতে প্রবেশ করেছে মানুষ । পাশাপাশি দীর্ঘ দু'বছর করোনা মহামারির সময়ে বই ছেড়ে অনলাইন বা মোবাইলেই বেশি আসক্ত হয়েছে বর্তমান প্রজন্ম । এসময় অনলাইন ক্লাস শুরু হয় ৷ পরীক্ষাও হয় অনলাইনেই ৷ শুধু পড়াশুনা নয়, এরই সঙ্গে আর্থিক লেনদেনও অনলাইনেই সারছে নয়া প্রজন্ম ।
এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে ৷ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফলাইন পড়াশোনা আবার শুরু হয়েছে ৷ কিন্তু কোথাও গিয়ে বইয়ের চাহিদা যেন আর বাড়েনি, বরং উলটে কমেছে ৷ ফাকা দোকানে বসে রয়েছেন বই ব্যবসায়ীরা (Booksellers) ৷ এমনই চিত্র ধরা পড়ল মেদিনীপুরের বই দোকানগুলিতে ৷ শুধু সিলেবাসের বইটুকু কিনেই বই দোকানের পথ ছাড়ছে পড়ুয়ারা । এক সময় যে বই দোকানে লাইন পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠতো, সেই সব দোকানে এখন আসছেই না কোন পড়ুয়ারা । ফলে রীতিমতো বড় ব্যবসা হারিয়ে এখন কোনক্রমে নিজেদের অস্তিত্বটুকু টিকিয়ে রাখার লড়াই করছেন বই দোকানের ব্যাবসায়ীরা ।
যদিও তাঁরা কারণ হিসেবে মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক এবং ডিজিটাল মাধ্যমকে দায়ী করেছেন ৷ সঙ্গে মানুষের ধৈর্য ও মানসিকতাকেও দুষতে ছাড়ছেন না ব্যবসায়ীরা । তাদের মতে মানুষ শিল্প, কারখানা, চাকরি ক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়া সময় বাঁচাতে মুখ ফিরিয়েছে বই থেকে । মেদিনীপুরের দুই বই ব্যবসায়ী অমূল্যমোহন চক্রবর্তী ও সুমন্ত চক্রবর্তী বলেন, "একসময় যে বই কিনতে হুড়মুড়িয়ে পাঠক এবং ক্রেতারা আসত, এখন আর সেইভাবে ভিড় হয় না । কোনক্রমে সিলেবাসের বই নিয়েই তারা চলে যান।"
আরও পড়ুন: মোবাইলে পড়াশোনাতেই ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে কোন্নগরের কাব্য
এ বিষয়ে উঠতি কবি অভিনন্দন মুখোপাধ্যায় বলেন, "ছোটবেলা আমাদের সবার কেটেছে বই, কবিতা ও ছড়ার মধ্য দিয়ে । যেখানে নতুন বই কিনতে ভিড় করত পড়ুয়ারা । নতুন বইয়ের পাতার গন্ধ শুকতাম । বর্তমান প্রজন্মের কাছে অনলাইন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক-সহ ডিজিটাল মাধ্যমের দাপটে তা হারিয়ে গিয়েছে । এটা উন্নতি নয়, বরং অবনতি । কারণ বইয়ের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ছেদ হলেই মনুষ্যত্ব শেষ হবে । হারিয়ে যাবে বহু কবি, লেখক থেকে ব্যবসায়ীরা।"