মেদিনীপুর, 17 অক্টোবর : এতদিন জাঁকজমক ভাবেই মা উমার আরাধনা হত পশ্চিম মেদিনীপুরের চিরিমারসাই নন্দী বাড়িতে । দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসতেন এই পুজো দেখতে । তবে এবার সেসব অতীত । কোরোনার জেরে এবছর আর মূর্তি পুজো নয়, ঘট পুজো করেই দেবী দুর্গার আরাধনা করবে নন্দী পরিবার । তাদের একটাই লক্ষ্য মানুষকে কোরোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচানো । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামীদিনে আবার পুরোনো রীতি মেনেই হবে নন্দী বাড়ির দুর্গাপুজো ।
মেদিনীপুরের যে কয়েকটি বনেদি বাড়ি এখনও পূজো চালিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হল শহরের চিরিমারসাই নন্দী বাড়ির দুর্গাপুজো । 400 বছরের বেশি সময় ধরে এই পুজো হয়ে আসছে । পরিবার সূত্রে জানা যায়, 405 বছর আগে নিজেদের প্রতিপত্তি ও জমিদারি দেখানোর জন্য রামচাঁদ নন্দী এই পুজোর সূচনা করেন । এই পুজোর সূচনা হয় জমিদারি প্রথা অনুযায়ী বিরাট সাবেকি প্রতিমা দিয়ে । চতুর্থী থেকে দশমী পর্যন্ত মায়ের আরাধনা হয় । এখানে বৈষ্ণব মতে পুজো হয় । দশমীতে পালকিতে সওয়ারি হয়ে মায়ের প্রতিমা নিরঞ্জন হয় । প্রথম দিকে এই পুজোর জাঁকজমক ছিল ব্যাপক এবং বহুল প্রচলিত । যেমন একদিকে পুজোর নানা রীতিনীতি থাকত তেমনি থাকত আতশ বাজি প্রদর্শন ও দর্পণ দেখে সিঁদুর খেলা । শুধু জেলাই নয় জেলার বাইরে থেকেও বহু দর্শনার্থী নন্দী বাড়ির পুজো দেখতে আসতেন । তবে ধীরে ধীরে সেই জাঁকজমকে ভাঁটা পড়তে শুরু করে । কালক্রমে লোপ পেয়েছে জমিদারি প্রথাও । বর্তমানে এই নন্দী বাড়ির দেবত্ব সম্পত্তিতে রয়েছে তিনটি পুকুর, 12টি দোকান ও একটি বাজার । পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোর্টকাছারী চলছে রিসিভারের দায়িত্ব নিয়ে । ফলে পুরোনো এবং আভিজাত্যপূর্ণ নন্দীবাড়ির পুজো আজ মলিন হয়ে পড়েছে ।
তবে শত সমস্যার মধ্যেও আজ পর্যন্ত সেখানে মূর্তি ছাড়া পুজো হয়নি । তবে এবছর কোরোনার জেরে ঘট পুজোর মাধ্যমেই পুজো সারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নন্দী পরিবার । কারণ কোরোনা সংক্রমণ রুখতে জমায়েত নিষিদ্ধ । তাই অল্পের উপরেই এবারের পুজো সারবেন তাঁরা । সিঁদুর খেলারও আয়োজন করা হচ্ছে না ।
এবারে পুজো দায়িত্বে থাকা নন্দী পরিবারের সদস্য চন্দনা নন্দী বলেন, "প্রতি বছরই আমাদের এই পুজোর রীতিনীতি ও ঐতিহ্য দেখতে হাজির হন দূরদূরান্তের মানুষজন । পুজোর পুরোনো রীতি আমরা বজায় রেখেছি । তবে জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘটেছে । এই পুজো হয় বৈষ্ণব মতে । মূলত পুজো শুরু হয় ষষ্ঠী থেকে । সপ্তমীতে কলা বউ স্নান এবং অষ্টমী পুজোতে 108 পদ্ম ও প্রদীপ দিয়ে মায়ের পুজো হয় । বিসর্জন পর্বে দর্পণে মুখ দেখে সিঁদুর খেলা হয় এবং 35 জন বেহারা দিয়ে রথে করে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় গান্ধিঘাটে । এই পুজো উপলক্ষে বাড়িতে ফেরেন নন্দী পরিবারের দেশ-বিদেশে থাকা সদস্যরা । পুজোর কটা দিন আনন্দ করেই তারা আবার ফিরে যান কর্মস্থলে । যদিও বর্তমানে দেবত্ব সম্পত্তি নিয়ে কোর্টকাচারী চললেও পুজোর কখনও বন্ধ হয়নি । তবে এবার আমাদের প্রধান লক্ষ্য কোরোনা সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচানো । তাই জমায়েত রুখতে পুজোর নানা রীতিতে বদল আনা হয়েছে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামীদিনে ফের জাঁকজমকভাবে পালিত হবে নন্দী বাড়ির দুর্গাপুজো ।