চন্দ্রকোনা, 17 মে : বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান! না এটা কোনও ছাপার ভুল নয় । এমনই কাণ্ড ঘটিয়ে তাক ফেলে দিয়েছেন বিদ্যাসাগরের শ্বশুরবাড়ির লোকজন । বিষয়টি প্রতীকী হলেও, সন্দেহ নেই এমন উদ্যোগ প্রতিবাদেরই স্বরূপ ।
একটু স্পষ্ট করে বলা যাক । গত মঙ্গলবার । কলকাতায় BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর সভা । যে সভাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার বেঁধে যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-বিদ্যাসাগর কলেজ সংলগ্ন এলাকায় । হামলাকারীদের হাত থেকে বাদ যায়নি বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্রের আবক্ষ মূর্তি । ভেঙে যায় সেটি । আর এই ভাঙচুরের ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগরের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ।
পরিবারের লোকজনের দাবি, এই ঘটনা অপমৃত্যুর সামিল । 'খুন' করা হয়েছে তাঁদের জামাইকে । ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মাথা । আর তাই প্রতিবাদের ভিন্ন পন্থা নিলেন তাঁরা । আজই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানার ক্ষীরপাই কাছারি পাড়ায় ভট্টাচার্য পরিবার পারলৌকিক ক্রিয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । রীতি মেনে, মন্ত্র উচ্চারণ করে পালন করা হয় যাবতীয় পারলৌকিক কাজকর্ম । শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের জন্য এ দিন অরন্ধনও পালন করে ভট্টাচার্য পরিবার ।
১৮৩৪ সালে ভট্টাচার্য পরিবারের শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের বছর আটের মেয়ে দীনমনি দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বিদ্যাসাগরের। সেই সময়ের কেউই আজ আর বেঁচে নেই । পরিবারের বর্তমান সদস্য গৌতম ভট্টাচার্য এই পারলৌকিক অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা । গৌতমবাবুর দাবি, পরিবারের বর্তমান সদস্যরা মূর্তি ভাঙার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না । তাঁরা শুধু ক্ষুব্ধ তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো শোকস্তব্ধও তাঁরা ।
বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে উঠেছে রাজ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বাকযুদ্ধ সপ্তম দফা ভোটের আগে রাজ্যের হাওয়া গরম করেছে । শুধু মূর্তি ভাঙা নয়, কে-কোন রাজনৈতিক দল মূর্তি গড়বে তা নিয়েও শুরু হয়েছে দাবি-পাল্টা দাবি । মূর্তি ভাঙার ঘটনায় পথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সমাজকর্মীদের একাংশ । কিন্তু, এ ভাবে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে প্রতিবাদ জানানোর ঘটনা সত্যিই বিরল ।