গড়বেতা, 9 নভেম্বর : 245 রকমের ধান চাষ করছেন ৷ তাও মাত্র 18 বিঘা জমিতে ৷ ব্যবহার করছেন না কোনও রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ৷ ধান চাষে নতুন পথ দেখাচ্ছেন চাষি প্রদ্যুৎ সামন্ত ৷ এইসব ধানে বিভিন্ন রোগ দূর হবে বলে কৃষি ব্লক আধিকারিকের বক্তব্য ৷
ধান চাষের পাশাপাশি ধানের থেকে বেরোনো খাড়া রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রদ্যুৎ সামন্ত ৷ এবং যা খুব সুস্বাদু ৷ তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দপ্তরের সহযোগিতায় গড়বেতা তিন নম্বর ব্লকের চাছাগোট গ্রামে একসঙ্গে প্রায় 245 প্রজাতির দেশি ধানের চাষ করেছেন ৷ এই চাষ সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে ৷ কোনওরকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন না তিনি ৷ বলেন, প্রায় 18 বিঘা জমিতে 245 ভ্যারাইটির ধানের চাষ করছেন ৷ তার মধ্যে রয়েছে কালা ভাতি, কৃষ্ণ মুকুল, সেন্টেড রাইস ,তুলাইপাঞ্জি, সীতা সাল, নাগরা সাল সহ বিভিন্ন হারিয়ে যাওয়া দেশি ধান ৷ ধানের ফলন অন্যান্য হাইলিং ধানের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে ৷ সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ হয়েছে ৷
দেশি ধানের বাজার কোথায় কী ভাবে বিক্রি করা হবে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "অনেক মানুষ আছেন দেশি চালের ভাত খেতে চান ৷ স্থানীয় লোক তাদেরই এই ধান বিক্রি করে ৷ তাছাড়া কালাভাতি ধানের যে চাল হয় সেটি প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ৷ এগ্রিকালচার ট্রেনিং সেন্টার ফুলিয়া থেকে 245 রকমের দেশি ধানের প্রজাতির মধ্যে 235টি পেয়েছিলাম ৷ আর বাকি 10 টি নিজে সংগ্রহ করেছি ৷ এখানে এমন কিছু দেশি ধানের চাষ হচ্ছে যেমন জে পি 210, জে পি 90, কেরালা সুন্দরী ৷ এই ধানগুলো সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে, কোনওরকম রাসায়নিক সার ছাড়াই হেক্টর প্রতি 6 থেকে 8 টন ফসল পেতে পারি ৷ এখানে কালাভাতি ধানের চাষ হয়েছে প্রচুর ৷ এই ধানের চালের পাশাপাশি তাঁর ফেলে দেওয়া খাড়াগুলো আমরা খেতে পারি ৷ এই খাড়ার মধ্যে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় , যা শরীরে অত্যন্ত প্রয়োজন ৷ এছাড়া ও সেন্টেড রাইস , তুলাইপাঞ্জি চাষ করেছি ,মোগো চাষ করেছি ৷ এর মধ্যে কিছু কিছু ধান আছে যেগুলোকে আমরা মার্কেটিং করে বাজারজাত করতে পারি ৷ এই ধান চাষ করতে বিঘা প্রতি প্রায় 6 হাজার টাকার মতো খরচ হবে ৷ আর আনুমানিক এই ধান থেকে প্রায় বিঘা প্রতি কুড়ি হাজার টাকা লাভ হবে ৷"
অপর দিকে ব্লক কৃষি আধিকারিক অনুপ সামন্ত বলেন , "রাজ্য সরকারের প্রকল্প আর কে ভি ওয়াই প্রকল্পে চাষি প্রদ্যুৎ সামন্তকে 235 রকমের ধান দেওয়া হয়েছিল ৷ উনি আরও 10 রকমের অতিরিক্ত সংগ্রহ করে মোট 245 ধরনের ধান চাষ করছেন ৷ এই ধানের মধ্যে বেশিরভাগ রয়েছে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ৷ বিশেষ করে কালো রঙের যে কালাভাতি ধান চাষ হয়, সেই ধানের চাল খেলে ক্যানসার রোগ পর্যন্ত সারতে পারে ৷ এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ধান রয়েছে, যে চাল কে ফুটাতে হবে না, এমনই ঠান্ডা বা গরম জলে রাখলেই ভাত হয়ে যাবে ৷ এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সেন্টেড ধান পাওয়া যাবে যা থেকে পায়েস রান্না করা যেতে পারে ৷ এই ধান থেকে শুধু চাল পাওয়া যাবে তা নয় , এই ধানের শিষ থেকে বড়াও তৈরি করা যাবে ৷ পাশাপাশি এর খাড়া দিয়ে ভালো সুস্বাদু রান্না করা যাবে ৷ "