চন্দ্রকোনা, 14 মার্চ : বৃদ্ধার জমি-জায়গা পড়েছিল অনেকদিন ধরেই । আর তাতেই নজর পড়ে পাড়ারই এক ব্যক্তির । অভিযোগ, ওই সম্পত্তি হাতানোর জন্য সোজা তিনি হাজির হন গ্রাম পঞ্চায়েতে । সেখান থেকে জীবিত ওই বৃদ্ধার ডেথ সার্টিফিকেট বের করেন (Fake Death Certificate of Alive Old Woman For Property) । চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানার ধরমপুর গ্রামে ৷
গ্রামের বাসিন্দা 74 বছর বয়সি অন্নপূর্ণা পাঁজা ৷ জানা গিয়েছে, অন্নপূর্ণা পাঁজার বাপের বাড়ি গড়বেতা থানার ফতেগড় গ্রামে । শ্বশুর বাড়ি চন্দ্রকোনার ধরমপুরে । স্বামী রাসবিহারী পাঁজা ও তিন ছেলের সংসারে বহাল তবিয়তে রয়েছেন অন্নপূর্ণা দেবী । তবে প্রশ্ন, একটাই যাচাই না করে কীভাবে সার্টিফিকেট বের করে দিল গ্রাম পঞ্চায়েত?
আরও পড়ুন : Fire at Tangra Update : ট্যাংরায় আগুন 90 শতাংশ নিয়ন্ত্রণে, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে নগরপাল বিনীত গোয়েল
অন্নপূর্ণা পাঁজার ছেলেদের দাবি গড়বেতার ফতেগড় গ্রামে তাঁর দাদুর(অন্নপূর্ণার বাবা) রেখে যাওয়া কিছু সম্পত্তি জমি জায়গা রয়ে গিয়েছে । দাদুর দুই মেয়ের একজন মারা গিয়েছেন এবং বর্তমানে অপর মেয়ে অন্নপূর্ণা পাঁজা তথা তাঁদের মা জীবিত রয়েছেন । দাদুর কোনও ছেলে না-থাকায় এবং বর্তমানে তাদের মা অন্নপূর্ণা পাঁজাই বাপের বাড়ির পড়ে থাকা সম্পত্তির উত্তরাধিকার বলে দাবি বৃদ্ধা অন্নপূর্ণা পাঁজার ছেলেদের ।
বৃদ্ধার ছেলে কমল কুমার পাজাঁর অভিযোগ, "মায়ের বাপের বাড়ির পড়ে থাকা সম্পত্তি হাতানোর জন্য ফতেগড় গ্রামের বাসিন্দা সুদর্শন মল্লিক নামের ব্যক্তি ভুয়া শংসাপত্র বের করে প্রতারণার চেষ্টা করছে । গড়বেতার আমশোল গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে মা অন্নপূর্ণা পাঁজার নামে ডেথ সার্টিফিকেট বের করা হয়েছে । এছাড়াও বিভিন্ন দফতর থেকে মায়ের নামে ভুয়া শংসাপত্র বের করে মায়ের বাপের বাড়ির সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টা করেছেন সুদর্শন মল্লিক ।"
আরও পড়ুন : River Rafting Accident in Rishikesh : ব়্যাফটিং বোর্ড উল্টে নিখোঁজ ব্যারাকপুরের পর্যটক
বেশ কিছু দিন আগে সুদর্শন মল্লিক তাঁদের মায়ের বাপের বাড়ির জমি জায়গা নিজের নামে করার জন্য গড়বেতা 3 নং ব্লকের বিএলআরও দফতরে জমির রেকর্ডের জন্য আবেদন করেন এবং দফতর থেকে এনকোয়ারি করতে গেলে সুদর্শন মল্লিকের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন বৃদ্ধা অন্নপূর্ণা পাঁজার ছেলেরা । ঘটনা জানতে পেরে সুদর্শন মল্লিকের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোনও সুরাহা মিলেনি বলে অভিযোগ বৃদ্ধার ছেলেদের ।
আরও পড়ুন : Leopard Killed : চিতাবাঘের মাংস দিয়ে মহাভোজ করেছে গোটা গ্রামবাসী, উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আমশোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বৃদ্ধার ছেলেরা । একজন বৃদ্ধা যিনি এখনও স্বামী ছেলেদের নিয়ে জীবিত অবস্থায় রয়েছেন তার নামে কি করে গ্রাম পঞ্চায়েত ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করে? যদিও এ বিষয়ে আমশোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উমা রানি মাল জানান, "জন্ম মৃত্যুর সার্টিফিকেট আমরা দিতে চাই না কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্যরা চাপ দেয় সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সদস্যদের কথায় কিছু ক্ষেত্রে দিয়ে দিতে হয় । এক্ষেত্রে যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে আলোচনা করে খতিয়ে দেখতে হবে ।"
আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই সুদর্শন মল্লিক অবশ্য তাঁর ভুলের কথা স্বীকার করে বলেন, "অন্নপূর্ণা পাঁজা সম্পর্কে আমার পিসি হন । তাঁর বাপের বাড়ির পড়ে থাকা একটি জমি আগে নিজেরা চাষ করত কিন্তু পয়সা নিয়ে তাঁরা জমিটি আমাকে ছেড়ে দেয় ৷ বহু বছর ধরে আমি চাষ করছে সেটিতে ।" সেই জমির কাগজ না থাকায় সে আবেদন করে কিন্তু দফতর থেকে মঞ্জুর করেনি বলে জানান সুদর্শন মল্লিক । এমন ঘটনা সামনে আসতেই রীতিমতো হতবাক বৃদ্ধার পরিবার, সুবিচারের আশায় তাঁরা ।