পশ্চিম মেদিনীপুর, 11 ডিসেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও দায়রা আদালতে সম্প্রতি অতিথি বিচারক হিসেবে দেখা যায় এক মহিলাকে ৷ তিনি লোক আদালতের বেঞ্চে একদিনের জন্য একাধিক মামলার শুনানি করেছেন ৷ শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি ৷ জ্যোৎস্না পাল (নাম পরিবর্তিত) গার্হস্থ্য হিংসার শিকার ৷ শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হয়েছিল ৷ শরীরের 80 শতাংশ পুড়েও গিয়েছে তাঁর ৷ তবে, সেই ক্ষতকে জেদে পরিণত করে বর্তমানে প্যারা মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর ওই মহিলা ৷ তাঁকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও দায়রা আদালত একদিনের জন্য অতিথি বিচারক হিসেবে লোক আদালতে শুনানির দায়িত্ব সঁপে ছিল ৷
2006 সালে অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে হয়ে গিয়েছিল জ্যোৎস্নার ৷ বিয়ের একবছরের মধ্যে শ্বশুরবাড়িতে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা হয় ৷ গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ৷ প্রাণে বেঁচে গেলেও শরীরে 80 শতাংশ পুড়ে যায় তাঁর ৷ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে 3 বছরের চিকিৎসায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তিনি ৷ তবে, শুরু ফিরে আসেননি ৷ আত্মসম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পড়াশোনা শুরু করেন ৷ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন জ্যোৎস্না ৷ এর পর প্যারামেডিক্যালে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন ৷
বর্তমানে কোনও চাকরি না করলেও, ঘাটাল ব্লাড ব্যাংকে শিক্ষানবিশ হিসেবে অনুশীলন করছেন জ্যোৎস্না পাল ৷ তবে, তিনি একা নন ৷ তাঁর মতো গার্হস্থ্য হিংসার শিকার সমাজের বহু মহিলা ৷ তাঁদের অনুপ্রেরণা হিসেবে তুলে ধরতে জ্যোৎস্নাকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও দায়রা আদালতে একদিনের জন্য অতিথি বিচারক করা হয় সম্প্রতি ৷ তাঁকে মানুষের সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরাই লক্ষ্য ৷ জ্যোৎস্না পাল পারলে, চেষ্টা করলে বাকিরাও পারবেন নিজেদের প্রমাণ করতে ৷ সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে ৷
জ্যোৎস্না জানিয়েছেন, 2007 সালের 27 ডিসেম্বর তাঁকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিল ৷ সেই ঘটনার পর বহু আইনি লড়াই করে তিনি আজ এই জায়গায় ৷ তবে, জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের মদত তিনি পেয়েছেন ৷ সকলের সহযোগিতায় তিনি নিজেকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন ৷ তবে, তা সত্ত্বেও প্রাণের ঝুঁকি কমেনি তাঁর ৷ তিনি অভিযোগ করেছেন 2022 সালের 31 ডিসেম্বর, বাবার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত করেছিলেন জ্যোৎস্নার দাদা ৷ তাঁর মদতেই অন্যান্য আত্মীয়রা জ্যোৎস্নাকে প্রাণে মারার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ ৷
সেই লড়াইও পার করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা জ্যোৎস্না পাল ৷ এবার তাঁর স্বপ্ন নিজের চেষ্টায় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ৷ সেই সঙ্গে সমাজসেবা ও মানুষকে বাল্যবিবাহের মতো অপরাধ নিয়ে সচেতন করা ৷ তিনি জানিয়েছেন, কোনও বাবা-মা যাতে তাঁদের ছেলে-মেয়েকে অল্পবয়সে বিয়ে না দেন, সেই বার্তাই তিনি দিতে চান ৷
আরও পড়ুন: