মেদিনীপুর, 31 ডিসেম্বর: থুতুতে বিপদ ৷ তার জেরেই বাড়ছে যত সংক্রমণ ও মারণ ব্যাধির প্রকোপ ৷ কিন্তু, মেদিনীপুর পৌরসভা এলাকার একাংশ মানুষের মধ্যে সতর্কতার বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই ৷ যত্রতত্র থুতু ফেলে নোংরা করছে কিছু মানুষ ৷ বাদ যায়নি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং মেদিনীপুর পৌরসভা ৷ জরিমানা ধার্য করেও হয়নি সুরাহা ৷ তাই এবার সরকারের কাছে মেদিনীপুর পৌরসভার আর্জি, এ সংক্রান্ত কোনও আইন আনা হোক ৷ যা প্রয়োগ করা যেতে পারে সৌন্দর্যায়ন ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য (Diseases are Increasing in Medinipur due to Spitting Habit) ৷
করোনা অতিমারির চরম পর্যায়ে বারেবারে স্যানিটাইজ করে সংক্রমণ রোধ করার চেষ্টা করেছিল মেদিনীপুর পৌরসভা ও প্রশাসন ৷ মহামারি আইনে থুতু ফেলায় ছিল নিষেধাজ্ঞা ৷ তাই মাস্কের আড়ালে তখন মানুষ কিছুটা হলেও সতর্ক ছিল ৷ কিন্তু, বিপর্যয় কাটতেই আবার যেমনটা তেমন ৷ মহামারি আইন উঠে যেতেই মুখ থেকে সরেছে মাস্ক ৷ আর তারপরেই ফের বেলাগাম সমাজের একাংশ মানুষ ৷ সেইসব লোকজনের দৌলতে গুটখা ও পানের পিকে ভরছে মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ৷ এমনকি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের যত্রতত্র থুতু ও পানের পিকে ভরে গিয়েছে ৷ বাদ যায়নি মেদিনীপুর পৌরসভাও ৷
ফোর-জি থেকে ফাইভ-জি’তে ঢুকে পড়েছে আধুনিক সমাজ ৷ ইতিমধ্যে, ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে প্রায় সবাই ৷ শহর থেকে মফস্বল এমনকি গ্রামেও ৷ তবু, সচেতন হচ্ছে না শিক্ষিত সমাজের কিছু মানুষ ৷ তাই বদ-অভ্যাসের জেরে যত্রতত্র গুটখার পিক, কফ-থুতু ছিটিয়ে নোংরা করছে রাস্তাঘাট ৷ বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়াল ৷ এমনকি বাদ যাচ্ছে না হাসপাতাল চত্ত্বর ৷ সেই সঙ্গে ছড়াচ্ছে নানান মারণ ব্যাধি ৷ আর করোনার বিধিনিষেধ উঠে যেতেই মেদিনীপুর শহর ও জঙ্গলমহলের মানুষের মধ্যে সেই পুরনো স্বভাব আবারও ফিরে এসেছে ৷
বিশেষত হাসপাতাল চত্ত্বরে ৷ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং দফতরে সতর্কতামূলক বার্তা দিয়ে সাইন বোর্ড টাঙানো রয়েছে ৷ সেখানে থুতু ফেলে নোংরা করলে, শাস্তি হিসেবে জরিমানার কথাও বলা হয়েছে ৷ কিন্তু, কোথায় কি ! সেই সব সচেতনতামূলক বোর্ডের লেখাই পানের পিকে ঢেকে দিচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ ৷ আর সেই সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ ৷ এনিয়ে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন ৷ কোথাও রাস্তার পাশে দেওয়ালে বিভিন্ন ভগবানের ছবি দেওয়া টাইলস বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু, তাতেও বিশেষ কোনও সুরাহা হয়নি ৷
আরও পড়ুন: পান-গুটখার পিকের হাত থেকে হাওড়া ব্রিজকে রক্ষায় ব্যর্থ বিশেষ কবজও
এনিয়ে মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কিছু কিছু মানুষ নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছেন ৷ করোনার পরেও বহু মানুষ সচেতন নয় ৷ অতিমারি আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেলেও, কিছু মানুষ এখন এর থেকে শিক্ষা নেয়নি ৷ আর ফলে যত্রতত্র কফ, থুতু ফেলে রোগ-ব্যাধিকে ডেকে আনছে ৷ এনিয়ে মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলেন, ‘‘কিছু মানুষ তাঁদের স্বভাব বদলাতে পারছে না ৷ এনিয়ে আমরা সচেতন করতে পারি ৷ কিন্তু, বাকিটা মানুষের নিজের বোধবিচার ৷ তবে, সরকার কঠোর আইন আনলে পৌরসভা তা প্রয়োগ করতে পারে ৷’’
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্য শঙ্কর সড়ঙ্গী বলেন, ‘‘মানুষ সচেতন হয়নি ৷ সব কিছু প্রশাসন দিয়ে হয় না ৷ মানুষকে বুঝতে হবে, নিজের ফেলা থুতু অন্যের শরীরে রোগ সংক্রমণের কারণ না হয়ে দাঁড়ায় ৷ আমরা হাসপাতালে বলে বলে হাঁপিয়ে উঠেছি ৷ আমরা ফাইনেরও ব্যবস্থা করেছি ৷ কিন্তু, তাতেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না ৷ মানুষ সচেতন হলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি ৷’’