চন্দ্রকোনা, 18 সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2022) অনুদান হিসাবে পুজো কমিটিগুলিকে 60 হাজার টাকা করে খয়রাতি দিচ্ছে রাজ্য সরকার (West Bengal Government) ৷ অথচ তাঁদের নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই ! কথা হচ্ছিল সুকুমার রুইদাসের সঙ্গে ৷ তিনি ঢাকি ৷ তাঁদের ছাড়া দুর্গাপুজোর কল্পনাও অসম্ভব ৷ অথচ আজ সেই ঢাকিদেরই নুন আনতে পান্তা ফুরোয় ৷ কিন্তু, সরকার, প্রশাসন কেউই তাঁদের পাশে দাঁড়ায় না ৷ আক্ষেপের সঙ্গেই তাই অভিমান আর ক্ষোভ ঝরে পড়ল সুকুমারের গলায় ৷
পুজোর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) চন্দ্রকোনার (Chandrakona) ভগবানবাটি গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ এই গ্রামে সব মিলিয়ে প্রায় 60 ঘর ঢাকি পরিবার রয়েছে ৷ এঁদের মধ্যে কারও কারও দু-এক টুকরো জমি থাকলেও সকলের সেই ভাগ্যও নেই ৷ তাই অধিকাংশই হয় ভাগচাষি, আর তা না হলে দিনমজুর ৷ আজকের দিনে এই কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনা একপ্রকার অসম্ভব ৷ কিন্তু, উপায় নেই ৷ সরকার 'বড়লোক' পুজো কমিটিকে অনুদান দিলেও, তাদের কথা ভাবে না ৷ তাই এভাবেই অভাবে দিন কাটে ভগবানবাটির ৷
আরও পড়ুন: শিল্পনগরীতে বায়না না পেয়ে হতাশ ঢাকি থেকে ফুল বিক্রেতা
এই গ্রামেরই বাসিন্দা সুকুমার রুইদাস ৷ তিনি বললেন, ভোট এলেই নেতাদের দেখা মেলে ৷ কিন্তু, ভোট মিটলেই সব ভোঁ-ভাঁ ! তবু তাঁরা ঢাক বাজান ৷ তাতে পুজোর সময় অন্তত বাড়তি ক'টা টাকা রোজগার হয় ৷ যদিও তার বিনিময়ে বড় মূল্য চোকাতে হয় ৷ উৎসবের মরশুমে ঘরের মানুষ ঘরে থাকে না ৷ ফলে উৎসবের রেশ যে ঢাকিদের গ্রাম থেকে শুরু হয়, সেখানেই উৎসবের আলো পৌঁছয় না !
এত কিছুর পরও ঢাক বাজানোয় এতটুকুও ফাঁক রাখতে নারাজ ভগবাটির ঢাকিরা ৷ তাঁদেরই একজন ক্ষুদিরাম রুইদাস ৷ কথায় কথায় জানালেন, প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে সবাই মিলে তালিম নেন ৷ তা না হলে যে দুর্গাপুজোর মণ্ডপে ঠিক মতো তাল মেলাতেই পারবেন না তাঁরা ৷ যাঁদের গোটা জীবনটাই তালকাটা, তাঁদের মুখে এমন কথা সত্যিই অবাক করে সাংবাদিককে ৷ অবাক হন না মঙ্গলা রুইদাসরা ৷ তাঁরা অপেক্ষা করেন পুজো শেষ হওয়ার ৷ পুজো শেষ হলে তবেই তো ঘরে ফিরবে ঘরের লোক ৷ সঙ্গে আনবে টাকা, বাবুদের 'দান করা' পুরনো জামা, চাদর, কিংবা পুজো কমিটির বিলি করা নতুন কম্বল ! এগুলোই তো তাঁদের পুজোর উপহার !