পশ্চিম মেদিনীপুর, 9 সেপ্টেম্বর: খুব ছোট বেলা থেকেই ডুবেছিলেন নেশায় ৷ পরিবার থেকে শতচেষ্টা করেও লাভ হয়নি ৷ অবশেষে ছ'টা বছর নেশা নিবারণ কেন্দ্রে গিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পেরেছেন বছর 38-এর হর্ষ বায়েন ৷ এখন অন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সুস্থজীবনে ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর তিনি ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরে ধর্মায় গড়ে তুলেছেন আরোগ্য ফাউন্ডেশন ৷ অংশীদার হয়েছেন সমাজ সেবায় ৷
এই বিষয়ে হর্ষ বায়েন বলেন, "ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় চলে গিয়েছিলাম কুপ্রভাবে। দিনরাত নেশা করতাম,পড়ে থাকতাম বাড়িতে ৷ ঝগড়াঝাঁটি-মারপিট, অশান্তি লেগেই থাকত। পড়াশোনা খুব বেশি দূর এগোয়নি। মা-বাবা অবশেষে দিয়ে আসে নেশা নিবারণ কেন্দ্রে। সেখানে ছ'বছর থেকেছি ৷ অবশেষে এই ধরনের ঘটনা কোনও পরিবারে হলে কী ধরনের কষ্ট হয় তা বুঝেছি ৷ তারপরেই মনে হয়েছে, আমি ও আমার পরিবার যে খষ্টের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, আমাদের আশাপাশে এমন অনেক পরিবার ও মাদকাসক্ত ব্যক্তি রয়েছেন ৷ তাঁদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতেই এক বন্ধুর সঙ্গে মিলিত প্রয়াসে এই নিবারণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।"
তিনি আরও বলেন, "এখানে চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট কোনও টাকা-পয়সা ধার্য করা হয় না ৷ যে যেমন পারেন টাকা দিয়ে যান ৷ না-পারলে চাল, ডাল, সবজির বিনিময়ে চিকিৎসা করান ৷ আবার অনেকে বিনে পয়সায়ও দিনের পর দিন এখানে রয়েছেন নেশা ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ 11 বছরে বহু যুবক ফিরে গেছেন এই সেন্টার থেকে নেশা মুক্ত হয়ে। আমার আগামিদিনে স্বপ্ন রয়েছে বৃদ্ধাশ্রমের পাশাপাশি অনাথ শিশুদের জন্য় একটা আশ্রম গড়ে তোলার।"
এক বন্ধুর সহযোগিতায় 2012 সালে খোলা হয় নেশা নিবারণ কেন্দ্র। এই নিবারণ কেন্দ্রে প্রায় শতাধিক নেশা আসক্ত মানুষজন রয়েছেন। শুধু জেলা থেকে নয়, বিভিন্ন রাজ্য থেকেও অনেক নেশা আসক্ত ব্যক্তিরাও রয়েছেন এই কেন্দ্রে ৷ ভোরবেলা থেকে শুরু হয়ে যায় তাঁদের ট্রেনিং। যোগ ব্যায়াম করানো, নিজেদের ঘর পরিষ্কার করানো, জামা প্যান্ট পরিষ্কার করানো ইত্যাদি কাজে তাঁদের সাবলম্বী করে তোলা হয় ৷
আরও পড়ুন: কৃষ্ণনগরে স্কুলে ব়্যাগিং-আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি ! পাঁচ ছাত্রকে সাসপেন্ড
এছাড়াও মেডিটেশন, গ্রুপ ডিসকাশন, আত্মসমালোচনা করা ইত্যাদি বিশ্লেষণ হয়ে থাকে ৷ মনোরোগ চিকিৎসকদের সঙ্গে চলে সাইক্র্যাটিক ট্রিটমেন্ট। এই ক'বছরে শতাধিক মানুষকে নেশা মুক্ত করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও মাঝে মাঝে সমাজ সচেতনতামূলক কর্মসূচি বিশেষ করে গরিব মানুষদের মধ্যে অন্ন তুলে দেওয়া, জামা কাপড় বিতরণ, রক্তদান শিবির এমনকী স্বাস্থ্য শিবিরের মতো কাজ করে থাকে এই সংস্থা ৷