মেদিনীপুর, 28 জুন : লকডাউনে বন্ধ বিক্রিবাট্টা । নেই মাটির হাঁড়ি বা ভাঁড়ের চাহিদা । বন্ধ পুজোও । তাই একেবারেই বিক্রি হচ্ছে না সরা, ঘট বা প্রদীপ । এই পরিস্থিতিতে ধুঁকছে মৃৎ শিল্প । সমস্যায় মেদিনীপুরের কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা । মিলছে না প্রতিমা গড়ার বরাতও ৷ ফলে, সরকারি সাহায্যের দিকেই তাকিয়ে তাঁরা ।
কোরোনার প্রভাব পড়েছে সব ক্ষেত্রেই । সরকারি, বেসরকারি, ক্ষুদ্র, ছোটো, মাঝারি শিল্প, বাদ যায়নি কিছুই । হস্তশিল্পে এর প্রভাব আরও অনেকটা বেশি । পশ্চিম মেদিনীপুর, জঙ্গলমহল অধ্যুষিত বেশিরভাগ এলাকার মানুষই স্বনির্ভর হয়েছে হস্তশিল্পের মাধ্যমে । মেদিনীপুর শহরে এরকম একটি কুমোরপাড়া রয়েছে যেখানে মাটির ঘটি, বাটি, ভাঁড়, সরা, টব বিক্রি হয় । পুজোর নানা মাটির সামগ্রীও এখান থেকে বিভিন্ন জেলায় যায় । পুজোর আগে রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এইসব মাটির দ্রব্য তৈরি করেন এখানকার শিল্পীরা । বিয়ের মরশুমেও মাটির দ্রব্যের চাহিদা বেশি থাকে । রোজই লোকজন ভিড় করে জিনিস কিনতে । কিন্তু এবার এখানকার চিত্রটা পালটেছে । মার্চের পর থেকে বন্ধ হয়েছে লোকজনের আনাগোনা । প্রথম দিকে বিক্রি একটু আধটু হলেও জেলায় কোরোনা সংক্রমিতের খোঁজ পাওয়ার থেকে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় । ফলে, সমস্যায় পড়েছেন এখানকার শিল্পীরা ।
দুর্গাপুজো হবে এই আশায় অনেকেই কিছু কাজ করে রেখেছেন । তাঁদের কথায়, এবার যদি দুর্গাপুজোও না হয়, তাহলে খাবার জুটবে না আমাদের । বিয়ের অনুষ্ঠানও তো বন্ধ । তাঁদের অভিযোগ, কোনও রাজনৈতিক দল, সরকার বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের সাহায্য করেনি । ফলে, আগামীদিনে পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে বুঝতে পারছি না । কীভাবে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা চলবে, কীভাবেই বা পরিবারের বাকি খরচা উঠবে তা জানা নেই ।
এবিষয়ে কুমোরপাড়ার বাসিন্দা অরূপ পাল বলেন, "দীর্ঘ 30 বছরের বেশি সময় ধরে এই কুমোর পাড়ায় মাটির জিনিস তৈরি করে আসছি । এই করেই আমাদের সংসার চলে । কিন্তু এখন গোটা কুমোরপাড়াজুড়ে হাহাকার । কারণ দীর্ঘ লকডাউনে সবই বন্ধ । এই অবস্থা চলছে গত তিন মাস ধরে । এখনও মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য । তাই গোটা কুমোরপাড়া এখন আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে ।"
শিল্পী দীনবন্ধু দাস বলেন, "মাটির জিনিসপত্র তৈরি করা বন্ধ হয়ে গেছে এই লকডাউনে । বিশেষ করে এই মাটির জিনিসের চাহিদা থাকে বেনে দোকান, পুজো-পার্বণ এবং মিষ্টির দোকানগুলিতে । বিভিন্ন ভাঁড়, মাটির খুরি, মাটির সরাসহ বিভিন্ন দ্রব্য মানুষের চাহিদা মেটায় এখান থেকেই । কিন্তু লকডাউনে এসব বন্ধ দীর্ঘদিন । সেই কারণে আমাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে । আরও এক বছর আমাদের এরকম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে । তাই আশঙ্কায়, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি । মেলেনি কোনও সাহায্য ।"
এবিষয়ে শিল্পী যোগেন্দ্রনাথ দাস বলেন, "একদিকে লকডাউনে জিনিসপত্র কেনাকাটা নেই, অপরদিকে মাটি পাওয়া যাচ্ছে না । মাটি আনতে গেলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে । ফলে মাটি না পেয়ে আমরা প্রায় সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিয়েছি । এতে ক্ষতি সবার । আমাদের কোনও সাহায্য মিলছে না কীভাবে দিন কাটবে সেই চিন্তায় রয়েছে ।"