ঘাটাল, 29 জুন : প্রতিবছরই বর্ষায় প্লাবিত হয় মেদিনীপুরের বহু জায়গা ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালও তার অন্যথা নয় ৷ সেখানের রাজ্যসড়ক থেকে গ্রামীণ সড়ক, লক্ষ-লক্ষ মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েন। এর থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের তরফেও দেওয়া হয় প্রতিশ্রুতি ৷ কিন্তু প্রতিশ্রুতি, প্রতিশ্রুতি থেকে যায় ৷ কিন্তু এবার কেন্দ্রের আর্থিক অনুমোদনে হয়তো চিত্রটা বদলাবে (Central Govt Gave 1200 cr for Ghatal Master Plan in Paschim Medinipur) ৷ ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের আর্থিক অনুমোদনের খবরে খুশি ঘাটালবাসী।
যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দেওয়া এই অনুমোদনে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা ৷ বামেদের দাবি ললিপপ দেখানো হচ্ছে ঘাটালবাসীকে। পাশাপাশি কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসকদল তৃণমলও ৷ তৃণমূলের এই কটাক্ষকে পালটা আক্রমণ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির ৷
বিশেষ করে ঘাটাল ব্লকের 12টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে 10টি জলের তলায় চলে যায় বর্ষা এলেই। পাশাপাশি ঘাটাল পৌরসভার 17টি ওয়ার্ডের মধ্যে অধিকাংশই প্লাবিত হয়। সঙ্গে ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা ও দাসপুরেরও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। 1982 সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের সেচমন্ত্রী প্রভাস রায় ঘাটাল শিলাবতি নদীর পাড়ে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের শিলান্যাস করেন। তারপর কয়েক শতক কেটে গিয়েছে ৷ শিলাবতী নদীর জল বয়ে গিয়েছে তার উপর দিয়ে ৷ পট পরিবর্তন হয়েছে নানা রাজনৈতিক দলের। ঘাটালবাসীর অভিযোগ, প্রতিবার ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাছে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়নের দ্রুত দাবি তুলছিলেন ঘাটালের বানভাসি মানুষ।
আরও পড়ুন : গ্রামের রাস্তা ঠিক না-করলে মানুষ ভোট দেবে না, বিধায়কদের বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
তবে এবারে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের আর্থিক অনুমোদন পাওয়ায় খুশি ঘাটালের বানভাসি মানুষ। যদিও এই টাকা বরাদ্দের পরে ঘাটাল জুড়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ঘাটালের সিপিএম নেতা উত্তম মণ্ডল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য টানাপোড়েন ও আর্থিক বিভাজন নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, "ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হলে আমরা খুশি। শুধু ঘাটাল নই জেলার একটা বড় অংশ উপকৃত হবে। কিন্তু এই প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ ও ঘোষণার মধ্যে কোনও মিল নেই। এটা শুধুমাত্র ললিপপ দেখানো হচ্ছে জনগণকে।"
অন্যদিকে, মাস্টার প্ল্যান কার্যকর না-হওয়ার জন্য তৃণমূল সরকার তথা রাজ্যকেই কাঠগড়ায় তুলছেন ঘাটাল বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট। এ বিষয়ে তিনি বলেন, "মোদি সরকার আগেও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়নে সদর্থক ভূমিকা পালন করেছে ৷ কিন্তু রাজ্য সরকার গড়িমসি করে কেন্দ্রের উপর দায় চাপিয়ে এড়িয়ে গিয়েছে। ঘাটালবাসী তথা রাজ্যবাসীর দাবি ছিল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হোক। 1 হাজার 200 কোটি টাকা অনুমোদন দিয়ে মোদি সরকার তার দায়িত্ব পালন করেছে।"
আরও পড়ুন : 'তৃণমূল যোগ্য জবাব পেয়েছে', ওয়ার্ড দখলে রেখে প্রতিক্রিয়া নিহত তপন কান্দুর স্ত্রী'য়ের
যদিও বিরোধীদের সমস্ত দাবি খারিজ করেন ঘাটাল ব্লক তৃণমূল-কংগ্রেসের সভাপতি দিলীপ মাঝি। তিনি কেন্দ্রের আর্থিক অনুমোদনের বিষয় এড়িয়ে গিয়ে মাস্টার প্ল্যান রূপায়ন হবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই। তিনি বলেন, "যতটুকু শুনেছি আর্থিক অনুমোদন হয়নি, প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। তবে কে কী বলল, আমরা তাতে কান দিই না ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আগেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে 500 কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছেন। তাতে বেশকিছু কাজও হয়েছে। তবে কেন্দ্র সরকার যদি সহযোগিতা করে তাকে স্বাগত।"
তবে রাজনৈতিক তরজা বা কেন্দ্র ও রাজ্যর টানাপোড়েন যাই হোক, প্রতিবছর বন্যায় চরম দুর্ভোগ ও যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয় ঘাটালবাসীকে। বর্ষার মরশুম শুরু হয়েছে, এবারের বর্ষায় তাদের জন্য কী দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে তা, অজানা ঘাটালবাসীর। তবে আর্থিক অনুমোদন যদি মিলে থাকে তাহলে দ্রুত কাজ শুরু হোক এমনটাই চাইছেন ঘাটালের বানভাসি মানুষ।