মেদিনীপুর, 12 ফেব্রুয়ারি: বইয়ের (Coffee With Books) প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরি করতেই চায়ের দোকান দিয়েছেন বি-টেক চাওয়ালা । চা-কফির সঙ্গে স্নাক্সেরও ব্যবস্থা রয়েছে । তাই চা খেতে খেতে নিজের প্রিয় বই পড়ার নেশায় মত্ত চাপ্রেমীরা । মোবাইল এবং ডিজিটাল যুগে কম্পিউটার ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে বই পড়ার ঝোঁক বাড়াতেই এই উদ্যোগ বলে জানালেন বছর চব্বিশের কিশলয় মাইতি ।
চায়ের সঙ্গে বই পড়ার মজা, তাও আবার একই জায়গায় বসে । এ এক অন্য চাওয়ালার কাহিনী । নাম কিশলয় মাইতি, বয়স 24 বছর । কিশলয় বি-টেক করেছেন ভুবনেশ্বর থেকে । কিন্তু চাকরিতে কোনওদিন তাঁর মন বসেনি । ইচ্ছে ছিল বই পড়া এবং বই পড়ানো । তার সঙ্গে ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো । তাই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন ৷
মেদিনীপুর (West Midnapore News) শহরের শরৎপল্লি ডাক বাংলো এলাকায় তাঁর বাড়ি । দুই বন্ধুর সহযোগিতায় তিনি শুরু করেন পেয়ালা। এই পেয়ালাতে শুরুটা হয় চা ও কফি দিয়ে । নবীন প্রজন্ম থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি মানুষেরা যাতে চা খেতে খেতে তাঁদের প্রিয় লেখকের বইয়ে একটু চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেন তিনি ।
তাঁর চায়ের দোকানে রয়েছে সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর মতো নানা লেখকের বই ৷ তেমনই রয়েছে হলিউডের রিক রিঅরডনের লেখা দ্য হিরো অফ অলিম্পাস, এল জেমসের লেখা ফিফটি শেডস ডার্কার ও চেতন ভগতের রেভলিউশন টোয়েন্টি 20-র (Revolution Twenty 20) মতো বইও ৷ এ ছাড়াও থরে থরে সাজানো রয়েছে সানন্দা প্রচ্ছদ-সহ তরুণ প্রজন্মের কিশোর কিশোরী ও টিন এজারদের জন্য রূপচর্চার প্রচ্ছদ কাহিনী ।
রকমারি বই পেয়ে আপ্লুত বইপ্রেমীরা । দোকানে ঢুকলেই দেখা যায় যে সাজানো রয়েছে একের পর এক বই ৷ সেই বই অনেকে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িও নিয়ে চলে যান । যদিও তাতেই গোঁসা কিশলয়ের । কারণ এই বইগুলো তাঁর নিজস্ব সংগ্রহের । এইসঙ্গে রয়েছে বন্ধু-বান্ধবের এবং দিদির কিছু জমানো বই । এই বইয়ের সংরক্ষণে খুশি ক্রেতারা । অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকছেন এই বইয়ের সঙ্গে, পাশাপাশি চলছে চা ও কফি ।
আরও পড়ুন: ছাত্রীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, আসানসোলে চিকিৎসকের বাড়িতে ভাঙচুর
বর্তমানে চা-কফি সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চিকেন, ভেজ সুপ, পকোড়া, নুডলস-সহ রাতের খাবারের হোম ডেলিভারিরও ব্যবস্থা করেছে কিশলয় । এছাড়া ছোটখাটো অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা রয়েছে তাঁর রেস্তোরাঁয় ৷
ইটিভি ভারতকে কিশলয় জানালেন, "কোনওদিনই চাকরির ইচ্ছে ছিল না । তাই ব্যবসা করার ইচ্ছে থেকেই এই পেয়ালার সূত্রপাত । এরই সঙ্গে চাইতাম মানুষকে বই পড়াব । কারণ বর্তমানে মোবাইল ও ডিজিটালের দাপটে নতুন প্রজন্ম বই পড়া ভুলে গিয়েছে । বই দিয়ে মানুষের জ্ঞান বাড়ানো এবং বইপ্রেমীদের রসনা তৃপ্তি - দুইয়ের আয়োজন করেছি ৷ খুব ভালো লাগে যখন কেউ এখানে এসে চা খেতে খেতে বই পড়েন ।"
চা-কফি খেতে আসা গ্রাহক আত্মদীপ দাস, রীতশ্রী রায়, চন্দ্রাণী ঘোষ, ইন্দ্রনীল নাথ, সায়ন্তন কুন্ডুরা বললেন, "চা ও কফি খাওয়ার সঙ্গে বই পড়ার ইচ্ছেটা বহুদিনের ৷ কিন্তু এইভাবে কফি শপ বা রেস্তোরাঁয় এসে এই ধরনের ব্যবস্থা ভাবতে পারিনি । তবে খুব ভালো লেগেছে ৷ সমাজকে সচেতন করতে ওই ছেলেটা যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা সমাজের কাছে খুব ভালো বার্তা বলে আমরা মনে করছি ।"