মেদিনীপুর, 15 জুলাই: বিজেপির পোলিং এজেন্ট হওয়ার অপরাধ ৷ প্রথমে মারধর ৷ তারপর জোর করে মূত্র খাওয়ানোর অভিযোগ উঠল শাসক দলের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের এই ঘটনায় গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ অবশ্য পত্রপাঠ খারিজ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের জেলা সভাপতি ন্যক্কারজনক ঘটনাটিকে গ্রাম্য বিবাদের তকমা দিয়েছেন ৷ তবে এই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷
গোয়ালতোড় থানার মাইতা এলাকায় এক বিজেপি কর্মী পঞ্চায়েত নির্বাচনে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব সামলেছেন ৷ ভোটপর্ব মিটতেই শাসকদলের আক্রোশ গিয়ে পড়ে তাঁর উপর ৷ নির্যাতিত বিজেপি প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, "গত বৃহস্পতিবার দুপুরবেলায় আমাকে তৃণমূলের কয়েকজন কর্মী কথা বলার জন্য ডেকে নিয়ে যায় ৷ আমি প্রথমে যেতে চাইনি ৷ তখন তাঁরা কিছুক্ষণের জন্য বাইরে আসতে বলে ৷ আমি বেরোতেই দু'জন তৃণমূল কর্মী আমাকে ধরে তাদের পার্টি অফিসের পাশে এক জায়গায় নিয়ে যায় ৷ তারপরেই তারা প্রশ্ন কেন আমি পোলিং এজেন্ট হয়েছিলাম? কেন এই পার্টি করছি ?"
নির্যাতিত বিজেপি প্রার্থী আরও বলেন, "এরপরেই তাঁরা আমাকে মারধর করতে শুরু করে ৷ আমি পড়ে যাই ৷ তারপর আমাকে জিজ্ঞাসাক করে জল খাব কি না ৷ আমি হ্যাঁ বলতেই, রাস্তার নোংরা জল নিয়ে এসে ৷ পাশাপাশি একটা গ্লাসে করে মূত্র নিয়ে আসে ৷ আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে ৷ আমি খেতে না-চাইলে আমাকে আবার মারধর করে এবং গ্লাসের মূত্র আমার নাকে মুখে ছিটিয়ে দেয় ৷"
যদিও বিজেপি কর্মীকে মূত্র খাওয়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক শিবির তৃণমূল। জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, "যে ধরনের অভিযোগ আপনারা করছেন, তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদি এরকম কোনও ঘটনা ঘটে, তাহলে নির্যাতিত বিজেপি কর্মীকে বলব, থানায় অভিযোগ করতে। যদি এই ঘটনা ঘটে থাকে তবে আমি খতিয়ে দেখব। এটা গ্রাম্য বিবাদও হতে পারে ৷"
তারপরেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, গ্রাম্য বিবাদ হলেও কাউকে মূত্র খাওয়ানো কী উচিত? তার জবাবে তিনি বলেন, "উত্তরপ্রদেশে দেখা গিয়েছে, এক দলিত সম্প্রদায়ের গায়ে মূত্র বিসর্জন করছেন বিজেপি নেতা ৷ এখানে কী এই রকমের কোনও ভিডিয়ো রয়েছে ৷ যদি নাই থাকে তাহলে মুখের কথা কী করে বিশ্বাস করব? অনেকে তো অনেক কথাই বলতে পারেন ৷"
শাসকদলের কর্মীদের মারের চোটে আহত হন বিজেপির এই পোলিং এজেন্ট। তাঁকে বেহুঁশ অবস্থায় বিকেল নাগাদ দলীয় কর্মীরা তুলে নিয়ে গিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে পরিবার-সহ বিজেপি পার্টি অফিসের ঠাঁই নিয়েছেন নির্যাতিত বিজেপি কর্মী ৷ তিনি জানিয়েছেন, দিনের বেলা এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে, রাতে কী হবে, এই ভেবেই আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা ৷ তাই ঘর-বাড়ি ছেড়ে পার্টি অফিসেই ঠাঁই নিয়েছেন তিনি ও তাঁর পরিবার ৷ ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয় ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়।
আরও পড়ুন: ক্যানিংয়ে তৃণমূল কর্মীকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ আইএসএফের বিরুদ্ধে
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপির তরফে গোয়ালতোড় থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে শাসক দলের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে পুলিশের তল্লাশি চলছে ৷