নারায়ণগড়, 27 এপ্রিল : দু'মুঠো বালি নেওয়ার "অপরাধে" দিতে হবে দু'কোটি টাকা । তা না হলে সপরিবারে গ্রাম ছাড়তে হবে মহিলাকে । অভিযোগ, সালিশি সভা বসিয়ে এমনই নিদান দেন পঞ্চায়েত সদস্য । এবিষয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে গেলে তা নিতে অস্বীকার করেন পুলিশকর্মীরা । বদলে মীমাংসার চেষ্টা হয় । পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের পরিজাতপুর গ্রামের ঘটনা ।
পারিজাতপুর গ্রামের বাসিন্দা পুষ্পা রাউত । মুড়ি ভাজার জন্য গ্রামের স্কুলের সামনে থেকে বালি নিয়েছিলেন । হঠাৎই একদিন পুষ্পার বাড়িতে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য মিঠুন দত্ত এবং বুথ সভাপতি মানিক মহাপাত্র । তাঁরা বলতে থাকেন, বালি চুরি হয়েছে । এরপর ওই দু'জনের নেতৃত্বে গ্রামে সালিশি সভা বসে । সবার সামনে পুষ্পাকে একটি সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয় । জানানো হয়, বালি চুরির শাস্তি বাবদ দু'কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে । নাহলে গ্রাম ছেড়ে দিতে হবে । পুষ্পা বলেন, "টাকা দিতে না পারায় লকডাউনের মাঝেই ওরা আমাদের গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করে । ভয়ে আমি এদিক-ওদিক চারদিন ধরে ঘুরে বেরাই । পরে ছেলেকে জানিয়ে পুরো বিষয়টি পুলিশে জানাতে গেলে তারা অভিযোগ নেওয়ার বদলে মীমাংসার চেষ্টা করে ।"
পুষ্পা রাউতের ছেলে চন্দন রাউত বলেন, "ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না । বাইরে বেরিয়েছিলাম দুধ বিক্রি করতে । নারায়ণগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে । ওই পঞ্চায়েত সদস্য ও আমাদের ডেকে মীমাংসার কথা হয় । কিন্তু মিঠুন দত্ত আসেননি । আর পুরো বিষয়টি জানলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেননি । এবিষয়ে খবর করতে এসে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও আক্রান্ত হন । হেনস্থা করা হয় তাঁদের । এই নিয়ে তাঁরা কেশিয়াড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন । আশা করি, পুলিশ সেতরফে অন্তত ব্যবস্থা নেবে ।"
স্থানীয়দের একাংশের তরফে জানা যায়, ওইদিন পুলিশ মীমাংসার চেষ্টা করার পর নিজেদের গাড়িতেই মহিলাকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে যান । কিন্তু এবিষয়ে মুখে কুৃলুপ এঁটেছে নারায়ণগড় থানার পুলিশ । তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অভিযোগ অস্বীকার করে । জানায়, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি । স্থানীয়দের অনেকেরই মত, শাসক দলের চাপে পড়েই পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি । এবং পুরো ঘটনাটাই অস্বীকার করছে ।
এদিকে এই নিয়ে সুর নরম করেছেন পারিজাতপুর গ্রামের ওই পঞ্চায়েত সদস্য মিঠুন দত্ত । তাঁর দাবি, ওই মহিলা অসৎ । তিনি গ্রামে বালি চুরির কথা স্বীকার করেছেন । বলেন, "সালিশি সভা বসেছিল । আমি ছিলাম না । এবং ওঁকে গ্রামছাড়ার নিদান দেওয়া হয়েছে । আমি এর সঙ্গে যুক্ত নই । সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের আমি চিনতে না পেরে একটু খারাপ আচরণ করে ফেলি ।"
যদিও এবিষয়ে কড়া মনোভাব প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি । তিনি বলেন, "হ্যাঁ এমন ঘটনা ঘটেছে শুনেছি । এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে তা ঠিক হয়নি । আমরা এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছি ।"
এদিকে এরই পালটা প্রতিক্রিয়া জানালেন BJP-র জেলা সভাপতি সমিত দাস । তিনি বলেন, "তৃণমূল এইসব কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত । লকডাউনের সময় চাল চুরি করেছে । ওরা চাল চোর আর এখন সামান্য বালি নেওয়ার অপরাধে মহিলাকে হেনস্থা এবং গ্রামছাড়ার নিদান । এটা মানা যায় না । নারায়ণগড়ে এধরনের অভিযোগ ভূরিভূরি । আমরা এর আগে বহুবার অভিযোগ জানিয়েছি পুলিশের কাছে । নিশ্চয়ই ওই মহিলা কোনও বিষয় নিয়ে তৃণমূল নেতার দুষ্কর্ম ধরিয়ে দিয়েছিলেন । তাই তাঁকে সরাতেই এই ধরনের নিদান দিয়েছে । ওই তৃণমূল নেতার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি ।"