নারায়ণগড়, 26 এপ্রিল: ফের কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ শাসকদলের নেতার বিরুদ্ধে । ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় থানা এলাকায় ৷ অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পের অর্ধেক টাকা কাটমানি নিয়ে নিয়েছে অঞ্চল সভাপতি । বাকি টাকায় আর ব্যবসা হবে না ৷ তাই ক্ষুব্ধ হয়ে বাকি টাকা জেলাশাসককে ফেরত দিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন তৃণমূল নেতা । এই নিয়ে চাঞ্চল্য জেলা জুড়ে । নয়াপুকুর 1 নম্বর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত শিঠের বিরুদ্ধে এই টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । সরকারি প্রকল্পের টাকা পাওয়ার আগেই চাপে পড়ে 15 হাজার টাকা দিতে হয়েছে লক্ষ্মীকান্ত শিঠের ঘনিষ্ঠ দীপক দে নামে তৃণমূলের বুথ সভাপতির অ্যাকাউন্টে বলেও অভিযোগ ।
জানা গিয়েছে, গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে রাজ্য সরকারের তরফে পশুপালন প্রকল্প চালু হয়েছে ৷ সেই প্রকল্পে পোল্ট্রি ফার্মের জন্য আবেদন করেন নারায়ণগড়ের মহুলভাঙা গ্রামের বিলাসী সিং নামে এক মহিলা । আবেদনের ভিত্তিতে বিলাসী সিংয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গত 6 এপ্রিল 28 হাজার টাকা ঢোকে । অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পে আবেদন করার পর অর্থাৎ টাকা পাওয়ার আগে থেকেই তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি লক্ষীকান্ত শিঠ তাঁর লোক পাঠিয়ে 15 হাজার টাকা দাবি করে । কিন্তু দু'দিন দেরি হওয়ায় টাকা দিতে নানাভাবে হুমকিও দেওয়া হয় উপভোক্তা বিলাসী সিংয়ের স্বামী বাদল পালকে ।
অবশেষে অঞ্চল সভাপতি লক্ষীকান্ত শিঠের হুমকির মুখে পড়ে 15 হাজার টাকা জমা করতে হয়েছে ৷ সরকারি প্রকল্পের টাকা পাওয়ার দু'মাস আগে গত 10 ফেব্রুয়ারি লক্ষীকান্ত শিঠের ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের বুথ সভাপতি দীপক দে'র ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা করতে হয় বলে অভিযোগ । গত 6 এপ্রিল 28 হাজার টাকা বিলাসী সিংয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢোকে । এইদিন বাকি 13 হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন উপভোক্তা বিলাসী সিং ও তাঁর স্বামী বাদল পাল ।
বাদল পালের অভিযোগ, "28 হাজার টাকার মধ্যে আগেই 15 হাজার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে দিতে হয়েছে । বাকি 13 হাজার টাকায় কী করে পোল্ট্রি ফার্ম হবে ? তাই বাকি টাকাও জেলাশাসক দফতরে জমা দিতে এসেছি । কারণ টাকা না-পেয়ে অপরাধের ভাগীদার হতে চাই না । আমিও তৃণমূল করি ৷ গ্রাম কমিটির সভাপতি । আমি মনে করি ঘুষ নেওয়া যেমন অপরাধ, তেমনই ঘুষ দেওয়াও অপরাধ । কিন্তু অত্যাচারের ভয়ে টাকা দিতে হয়েছে । তাই বাকি টাকাটাও সরকারকে ফেরত দিতে এসেছি ।"
এই দিন এই উপভোক্তার সঙ্গে এলাকার পঞ্চায়েত বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ সুকমলা বেরাও আসেন জেলাশাসকের কাছে । তিনি উপভোক্তার সঙ্গে সহমত ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, "এই উপভোক্তাকে টাকা চেয়েছে এলাকার অঞ্চল সভাপতি । আমি সেই ঘটনা কারণ জানতে চাওয়ায় এবং প্রতিবাদ করায় আমাকেও হুমকির মুখে পড়তে হয় । এমনকী রাস্তায় দেখে নেওয়া হবে বলে হুমকি দেন ওই অঞ্চল সভাপতি । দলের সব নেতা নেতৃত্ব বিধায়ককে জানিয়েছি কিন্তু কোনও সুরাহা পাইনি এখনও পর্যন্ত ।"
আরও পড়ুন: একশো দিনের কাজের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধানের নামে পোস্টার চন্দ্রকোনায়