ঘাটাল, 29 মে: 'সবে ধন নীলমণি' একজন মাত্র বিধায়কই ছিল রাজ্যে কংগ্রেসের ৷ সেই বিধায়কও হাতছাড়া হল সোমবার ৷ সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাসকে তৃণমূলে যুক্ত করিয়ে কংগ্রেসের উদ্দেশে এদিন কড়া বার্তা দিলেন অভিষেক ৷ আর সেই সঙ্গে অভিষেকের হুঙ্কার, দিল্লিতে দোস্তি আর বাংলায় কুস্তি মেনে নেওয়া সম্ভব নয় ৷ একইসঙ্গে অভিষেকের স্পষ্ট অভিযোগ, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে কংগ্রেসেকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থনে প্রস্তুত, সেই সময় তৃণমূলের বিরোধিতা করে এ রাজ্যে কার্যত বিজেপির হাত শক্তিশালী করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
এদিন বাইরনের তৃণমূলের যোগদানের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় 'দলবদল' প্রসঙ্গে অভিনব যুক্তি খাঁড়া করেছেন ৷ তাঁর দাবি, দলবদল করিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইকেই শক্তিশালী করেছেন তিনি। প্রসঙ্গত, এদিন ঘাটালে সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাসকে পাশে বসিয়ে কার্যত কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অভিষেক। তিনি স্পষ্টতই বলেন, "লড়াইটা যখন কংগ্রেস বনাম বিজেপি, তখন কংগ্রেস-সিপিএম এবং আইএসএফের সঙ্গে জোট করে অধীর চৌধুরী কার হাত শক্তিশালী করতে চাইছে !" এর সঙ্গেই তিনি আরও জানান, 10 দিন আগে তৃণমূলনেত্রী জানিয়েছিলেন, কংগ্রেসকে সমর্থন করতে তাঁরা প্রস্তুত ৷ তৃণমূলের এক্ষেত্রে কোনও অসুবিধাও নেই। কিন্তু কংগ্রেস সেখানে বিজেপির হাত শক্তিশালী করছে বলেই অভিযোগ অভিষেকের ৷ তাঁর কথায়, "এখানে আমরা যখন বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়ছি, তখন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বিজেপির হাত শক্ত করছেন। সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আখেরে লাভ হয়েছে বিজেপির।"
অভিষেকের আরও সংযোজন, "আমাদের সভানেত্রী জোট বার্তা দেওয়ার পরও, অধীর চৌধুরী বলছেন আমরা কংগ্রেসের তরফ থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করব। এর অর্থ এ রাজ্যের কংগ্রেসের লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে নয়। এখানে যদি আপনারা বিজেপির হাত শক্তিশালী করেন, তাহলে চব্বিশের লড়াইয়েও আপনারা বিজেপির হাতই শক্তিশালী করছেন।" কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করতে গিয়ে অভিষেকের সাফ জবাব, একদিকে দিল্লিতে ইডিকে খারাপ বলছে কংগ্রেস। আবার অন্যদিকে বাংলায় একই দলের তরফে বলা হচ্ছে ইডি ভালো ৷ এই দুটো জিনিস একসঙ্গে চলতে পারে না বলেই জানাচ্ছে তৃণমূল সাংসদ। অভিষেক বলেন, "কর্ণাটকে আমরা লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করিনি। তাও আমরা বলেছি, নো ভোট টু বিজেপি। আমরা কর্ণাটকের মানুষকে বলেছিলাম আপনারা কংগ্রেসকে বা অন্য কাউকে ভোট দিন। কিন্তু বিজেপির হাত শক্তিশালী করবেন না। মানুষ সেই ডাকে সাড়া দিয়েছে। কংগ্রেস জিতেছে।"
আরও পড়ুন: তৃণমূলে যোগ বাইরন বিশ্বাসের, বিধানসভা ফের বাম-কংগ্রেস শূন্য
অথচ এখানে কংগ্রেস উলটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বলে অভিযোগ অভিষেকের। অন্যদিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হতে দেখা যায় তাদের ৷ এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আমরা কংগ্রেসকে সমর্থন করতে পারি ৷ আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। তৃণমূলকে দুর্বল করে বিজেপির হাত শক্তিশালী করবেন। দুটো জিনিস একসঙ্গে চলতে পারে না।" এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই রাজ্যে লড়াই আসলে বিজেপি বনাম তৃণমূল। এক্ষেত্রে তৃণমূলের হাত দুর্বল করলে শক্তিশালী হবে বিজেপি। অধীর চৌধুরী আদতে সেই কাজটি করছেন বলে সরাসরি অভিযোগ করেছে অভিষেক ৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, "আপনি দেশে 200-250 আসনে লড়াই করুন আপনাকে পূর্ণ সমর্থন করবে তৃণমূল। কিন্তু এখানে তৃণমূল 42 আসনে লড়াই করছে এখানেও কংগ্রেসের সমর্থন করা উচিত।" প্রসঙ্গত এদিনই তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অধীর চৌধুরী চব্বিশের নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী হওয়ার কথা বলেছেন।