মেদিনীপুর, 22 ডিসেম্বর: এখন চলছে ভাঙা গড়ার পর্ব ৷ আর তাই জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন পৌরসভায় অনাস্থা আনছেন খোদ শাসকদলের কাউন্সিলররা, এমনই অভিযোগ মেদিনীপুর পৌরসভায়। সূত্রের খবর, মেদিনীপুর পৌরসভার তৃণমূলের 20 জন কাউন্সিলরের মধ্যে 11 জন কাউন্সিলরের সই করা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি 'অভিযোগপত্র' পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। সেই চিঠি পৌঁছেছে এই মুহূর্তে শাসকদলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) কাছেও।
মূলত জেলা নেতাদের কাছে তো গত কয়েকমাস ধরেই অভিযোগ জানাচ্ছিলেন এই 11 জন কাউন্সিলর। তবে, বুধবার সন্ধ্যায় জানা যায় কেবল এই 11 জনই নন, আরও 3-4 জন কাউন্সিলরও নাকি চেয়ারম্যানের কাজকর্মে সন্তুষ্ট নন। তাঁরাও এই 11 জনের দলে ভিড়তে চাইছেন। ঠিক যেমন খড়গপুর পৌরসভার ক্ষেত্রে বিদ্রোহী কাউন্সিলদের সংখ্যাটা 18 থেকে বাড়তে বাড়তে 21-এ পৌঁছে গিয়েছিল, মেদিনীপুর পৌরসভার ক্ষেত্রেও সংখ্যাটা 14-তে পৌঁছতে পারে। কোনও কারণে 'অনাস্থা' এলে বিরোধী দলের 5 জন কাউন্সিলরও নাকি এই বিদ্রোহী কাউন্সিলদের সঙ্গেই থাকবেন বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ধুলো আর বিষ্ঠায় ঢাকছে মনীষীদের মূর্তি ! ক্ষুব্ধ বারাসত
প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর পৌরসভায় মোট 25 জন কাউন্সিলর। তৃণমূলের 20 এবং বাকিরা 5 (সিপিআইএম 3, কংগ্রেস 1, নির্দল 1)। তৃণমূলের দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, মেদিনীপুরের 'জনপ্রিয়' বিধায়ক জুন মালিয়া'র ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে গত মার্চ মাসে (2022) মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে কংগ্রেস থেকে আসা সৌমেন খানের নামেই শিলমোহর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ভাইস চেয়ারম্যান, সিআইসি, ইনচার্জও করা হয়েছিল জুন-সৌমেন গোষ্ঠীর 7-8 জনকে।
এই মুহূর্তে, সেই 8 জন ছাড়া বাকি 11 জনই চেয়ারম্যান সৌমেন খানের বিরুদ্ধে। এমনকী, নানা দায়িত্বে থাকা 8 জনের মধ্যেও 2-3 জন নাকি গোপনে যোগাযোগ রেখে চলেছেন 'বিদ্রোহী' 11 জনের বিরুদ্ধে। শহরে কানাঘুষো চলে, এই 11 জন কাউন্সিলর জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা এবং শহর সভাপতি ও 19 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডবের গোষ্ঠীর। বিধায়ক জুন মালিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী হওয়াতে, পৌরসভার প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁদের বঞ্চিত ও অপমানিত হতে হয় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: কোচবিহারে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও কল্যাণী পোদ্দারের বিরুদ্ধে চাকরির নামে টাকা তোলার অভিযোগ, লিফলেট রাস্তায়
সেজন্যই, খড়গপুর পৌরসভার বিদ্রোহী কাউন্সিলদের দেখে 'উৎসাহিত' হয়ে তাঁরাও এবার 'বিদ্রোহ' ঘোষণা করেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের মত। যদিও, রাজনৈতিক মহলের আরেকটি সূত্র জানাচ্ছে, এই 'খেলা'র প্লট তৈরি হয়ে গিয়েছিল, গত 20 নভেম্বর রাত 10টায় অরবিন্দ স্টেডিয়ামের সামনেই। যেদিন, সুজয়-দীনেন-প্রদ্যোৎ'রা বিপুল ব্যবধানে (18-2) জিতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। আর পরাজিত হয়েছিলেন আশিস চক্রবর্তী, সুব্রত সরকাররা। এবিষয়ে বিদ্রোহী করা শাসকদলের কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী বলেন, "দলের চেয়ারম্যান কিন্তু বহু কাজ করছেন কাউন্সিলরদের মতামত না-নিয়েই। তিনি নিজের ইচ্ছে মতো যা ভালো বুঝছেন তাই করছেন, কোনও কিছুরই তিনি ধার ধারের না। সমবণ্টন করে তিনি কাজ করছেন না, খারাপ ব্যবহার করছেন কাউন্সিলরদের সঙ্গে।"
অন্যদিকে, এবিষয়টা জানেন না বলে জানালেন মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান। তিনি বলেন, "আমাদের পৌরসভা 25 জন কাউন্সিলর নিয়েই চলছে সুষ্ঠু সুন্দরভাবে। কোথাও কোথাও কারও অভিযোগ থাকতে পারে তবে রাজ্যের কাছে যে চিঠি গিয়েছে সে বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।" যদিও এবিষয়ে তৃণমূল জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, "আমাদের দলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। অভাব-অভিযোগ থাকবে। মেদিনীপুর পৌরসভার ক্ষেত্রে কিছু কাউন্সিলরদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে খুব শীঘ্রই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে দেওয়া হবে।"
আরও পড়ুন: আগাছা ও জঙ্গলে ভরা 5 কোটি খরচে তৈরি দেশবন্ধু পার্কের সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র