দুর্গাপুর, 22 জুলাই: এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দ্বারা পরিচালিত হোম কর্তৃপক্ষের বিরূদ্ধে । শুক্রবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে । মৃত যুবকের নাম সুমিত দাস ৷ বয়স 26 বছর । শনিবার সকালে ওই যুবকের পরিবার দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে আসে । মৃতের পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আটক হয়েছে একজন । মৃতের মা পূর্ণিমা দাস বলেন, "এই হোমে আমার ছেলেকে মারধর করা হত । আমার ছেলে আমাকে বলেছিল ওকে খেতে দেওয়া হত না ।" তিনি জানান, তাঁর স্বামী আগেই মারা গিয়েছেন ৷ একমাত্র সন্তান, সেও মারা গেল ।
মৃতের মামা মদনমোহন দে'র অভিযোগ, "ওই হোমে সুমিতকে ঠিকমত খাওয়া দাওয়া দিত না, মারধর করত । গত মাস তিনেক ধরেই পরিবারের সঙ্গে সুমিতকে দেখা করতে দিত না হোম কর্তৃপক্ষ । দেড় বছর আগে আমার ভাগ্নেকে মানসিক চিকিৎসার জন্য এই হোমে এনে রাখা হয়েছিল । মাসিক 6-7 হাজার টাকা করে দিতে হত । ওর মা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এমনকী ভালো মন্দ খাবার দিয়ে যেত ৷ কিন্তু সেই খাবার তাঁকে খেতে দেওয়া হত না । আমার দিদি বলছিল, সারা শরীরে কালশিটে দাগ পড়ে গিয়েছে ভাগ্নের । এর থেকে বোঝা যায় ওকে মারধর করা হত ।"
দুর্গাপুর থানা এলাকার সিটি সেন্টারে লোকালয়ের মাঝে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে এই হোম প্রতিষ্ঠা হয়। মূলত যারা নেশাগ্রস্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, তাদেরকেই এখানে রেখে চিকিৎসা করা হত । সুমিতও সেই কারণে এখানে এসেছিলেন ৷ তবে অভিযোগ, এই হোম পরিচালনার সঙ্গে যুক্তরা তাঁকে পিটিয়ে খুন করেছে ।
আরও পড়ুন: সরকারি হোমে 'নাবালকের' অস্বাভাবিক মৃত্যু, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ
জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে সুমিতের মামার কাছে ফোন যায় ৷ তাঁকে বলা হয়, গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় সুমিতকে হোম থেকে মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে । পরে সেখানেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের । মৃত সুমিত সুভাষপল্লীর বাসিন্দা । স্বভাবতই এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকাবাসী । উক্ত হোমের বিরূদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হচ্ছে বলে পরিবার সূত্রে খবর । ইতিমধ্যেই পুলিশ হোম পরিচালন সমিতির একজন কর্তাকে আটক করে সিটি সেন্টার ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়েছে ।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ দে প্রশ্ন তোলেন, ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের নিয়ে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে হোম পরিচালনা করার অনুমতিকে দিয়েছে? তিনি বলেন, "আমরা প্রায়শই ওই ঘর থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পাই । কিন্তু কী কারণে, কারা চিৎকার করছে তা আমরা বুঝতে পারি না । এই যুবকের মৃত্যুর ঘটনার কথাও শুনলাম । অবিলম্বে এই জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে এই হোম তুলে দেওয়া উচিত ।"
আরও পড়ুন: স্কুল থেকে নিখোঁজ সরকারি হোমের 11 জন কিশোর
মৃত যুবকের কাকা শশাঙ্ক দাস অভিযোগ করেন, গত মাস থেকে তাঁর বৌদিকে ভাইপোর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি । ওই হোমে মারধর করা হত বলেই তাঁদের ধারণা । তাঁর কথায়, এর আগে বলা হয়েছিল সুমিত সুস্থ হয়ে আসছে । কিন্তু হঠাৎ এমন কী হল, যে তার মৃত্যু হল? আমরা চাইছি পুলিশি তদন্ত করুক এবং দোষীদের কড়া শাস্তি দিক ।