আসানসোল, 29 সেপ্টেম্বর: প্রায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রেলের স্বাভাবিক যাত্রী পরিষেবা । তাই স্বাভাবিক ছন্দে ঘুরছে না ট্যাক্সির চাকাও । আসানসোল রেল স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে হলুদ ট্যাক্সির চালকরা স্পেশাল ট্রেনের অপেক্ষায় চাতকের মতো বসে । সারাদিন অপেক্ষার পর কেউ হয়তো একটি ট্রিপ করতে পারেন, কারও কপালে তাও জোটে না । সংসারে আর্থিক টান, খারাপ হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশও । কবে স্বাভাবিক হবে তা কেউ জানে না ।
কোরোনা সংক্রমণ রুখতে 25 মার্চ থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন । গোটা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কোরোনার থাবা থেকে বাদ যায়নি ভারতও । সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয় যাত্রীবাহী রেল চলাচল । রেলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যাদের পেশা জড়িত তারাও পড়েন সমস্যায় ।
আসানসোল রেল স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে হলুদ এবং প্রাইভেট ট্যাক্সি মিলে রয়েছে প্রায় শতাধিক গাড়ি । মূলত ট্রেনের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয় হলুদ ট্যাক্সি । কিন্তু গত 6 মাস ধরে স্বাভাবিক রেল চলাচল বন্ধ । প্রথমে একেবারে বন্ধ ছিল যাত্রী পরিষেবা । তারপর শুরু হয় বিশেষ ট্রেন চলাচল । বর্তমানে আসানসোল স্টেশনে দিনে একটি থেকে দুটি ট্রেন থামে । এই কারণেই চরম সমস্যায় পড়েছেন ট্যাক্সি চালকেরা । লটারি করে প্যাসেঞ্জার পায় ট্যাক্সি চালকরা ।
কারও কপালে সারাদিনে একটি ভাড়া , কারও বা তাও জোটে না । এখন দিনের শেষে সবচেয়ে বেশি রোজগার হয় দেড়শ টাকা । আর এই টাকায় সংসার তো দূরের কথা চালকদের নিজেদেরই সারাদিনের খাবারই জোটে না । এছাড়া অনেকেই গাড়ি কিনেছেন মাসিক কিস্তির ভিত্তিতে । এই অবস্থায় অনেকেই কিস্তি দিতে পারছেন না । ফলে বেসরকারি ফিনান্স সংস্থা চোখ রাঙাচ্ছে । গাড়ির যন্ত্রাংশ খারাপ হচ্ছে। টায়ার শুকিয়ে যাচ্ছে, ব্যাটারি বসে যাচ্ছে । কী হবে কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না ।
আগে রেল স্টেশনের ভেতরেই ছিল ট্যাক্সি স্ট্যান্ড । লকডাউনের কারণে রেলস্টেশন সিল করে দেওয়া হয়েছিল । স্ট্যান্ড সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্টেশনের বাইরে । বর্তমানে রেল যাত্রীরা স্টেশনের বাইরে এসে নিজেরাই বিভিন্ন এজেন্সির গাড়ি বুক করে চলে যাচ্ছেন , কিংবা কারও কারও নিকটাত্মীয়রা গাড়ির ব্যাবস্থা করছেন । ফলে ভাড়া পাচ্ছেন না স্টেশনের ট্যাক্সি চালকরা ।
চালকরা জানাচ্ছেন এইভাবে চলতে থাকলে বেশি দিন আর তারা সামলাতে পারবেন না । বাধ্য হয়ে পেশা বদল করে অন্য কিছু করতে হবে । কবে এই অন্ধকার কাটবে তা কেউ জানে না ।