আসানসোল, 12 জুলাই: পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল আগে থেকেই প্রত্যাশিত ছিল । সেই মতো পশ্চিম বর্ধমানে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের আসনগুলি শাসকদল তৃণমূলেরই দখলে থাকল ৷ সামগ্রিক ফলাফলের বিচারে পশ্চিম বর্ধমানে সবাইকে অবাক করে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে সিপিএম ৷ বিজেপির ফলাফল তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে ।
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মোট 60টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে । গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে মোট আসনের সংখ্যা 1020টি । এর মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে 941টি আসন, সিপিএম পেয়েছে 50টি আসন এবং বিজেপি 25টি আসন । নির্দল প্রার্থীরাও 4টি আসনে জয়লাভ করেছে । যদিও আসন পেয়েও গ্রাম পঞ্চায়েত দখলের ক্ষেত্রে বিরোধীরা আহামরি কিছু করতে পারেনি । জেলার 60টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে একটি মাত্র সিপিএম দখল করেছে । বাকি 59টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে । রানিগঞ্জের আমরাসোতা গ্রাম পঞ্চায়েতটি নিরঙ্কুশভাবে ধরে রাখতে পেরেছে বামেরা । বাকি অন্য কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতেই বিরোধীরা হুল ফোটাতে পারেনি ।
অন্যদিকে, পশ্চিম বর্ধমান জেলার 8টি পঞ্চায়েত সমিতিই নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে তৃণমূল । বিরোধীরা কয়েকটি আসন পেলেও তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে । পশ্চিম বর্ধমান জেলায় পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন 172 । তৃণমূল জয় পেয়েছে 165টি আসনে । সিপিআইএম ও বিজেপি মাত্র 3টি ক'রে আসন পেয়েছে । একটি আসনে ভোট হয়নি কংগ্রেস প্রার্থী মারা যাওয়ার কারণে । পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদ একেবারেই বিরোধী শূন্য হয়ে গিয়েছে । জেলা পরিষদের মোট আসন 18টি । তৃণমূলই সেখানে 18টি আসনে জয়লাভ করেছে । বিরোধীরা একটিও আসন পায়নি ।
আরও পড়ুন: চা বলয়ে আধিপত্য কায়েম তৃণমূলের, ধরাশায়ী বিজেপি
মোটর উপর দেখতে গেলে পঞ্চায়েতের গ্রাম সংসদগুলিতে অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো ফলাফল করেছে সিপিএম । বাম দুর্গ জামুড়িয়ার চুরুলিয়া, হিজলগাড়া-সহ অন্যান্য গ্রাম সংসদগুলিতে ও রানিগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম সংসদে এগিয়ে এসেছে । মোট 50টি গ্রাম সংসদের আসন জেলাতে দখল করেছে সিপিএম । যদিও সেক্ষেত্রে দেখতে গেলে সালানপুর, বারাবনিতে সিপিএম শূন্য হয়ে গিয়েছে । অন্যদিকে পূর্ববর্তী ভোটের ফলাফলের দিকে নজর রাখলে বিজেপি অনেকাংশেই কমে এসেছে । সিপিএমের অর্ধেক আসন পেয়েছে বিজেপি । মোট 25টি গ্রাম সংসদের আসন বিজেপি নিজেদের দখলে আনতে পেরেছে । যদিও বিজেপি নেতৃত্ব বারবারই শাসকের সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছেন ।
আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তথা বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, "এই ফলাফল হবে আমার জানতাম । ভোট হয়েছে নাকি যে আমরা ভোট পাব? মানুষকে তো ভোট দিতেই দেয়নি তৃণমূলের সন্ত্রাস ।" অন্যদিকে সিপিএমের জেলা কমিটির নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, "যেখানে যেখানে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে আমাদের পার্টি ভালো ফল করেছে । শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মানুষ আমাদেরকে ভোট দিচ্ছে ৷ অর্থাৎ ভরসার জায়গা তৈরি হচ্ছে । এটাই আগামিদিনে আন্দোলনের পথকে সুগম করবে ।"
আরও পড়ুন: নারকীয় গণহত্যার বগটুইয়ে বিজেপির পরাজয়! স্বস্তি তৃণমূল শিবিরে
তৃণমূল জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ভোটে বিক্ষিপ্তভাবে দু'একটি জায়গায় অশান্তি ঘটেছে ৷ বাকি মোটের উপর ভোট সুষ্ঠু এবং অবাধ হয়েছে । সেই কারণেই বিরোধীরা এতগুলি আসন পেয়েছে । যদি ছাপ্পা, রিগিং হতো তাহলে বিরোধীরা কোন আসনই পেত না । প্রসঙ্গত, ভোটের আগে থেকেই বিরোধীরা শাসকদলের প্রতি বারবার অভিযোগ তুলেছে অশান্তি, ছাপ্পা, রিগিংয়ের । গণনার দিনও সেই একই অভিযোগ করল বিরোধীরা । তবে বিরোধীদের দাবি, যেখানে প্রতিরোধ হয়েছে সেখানেই ভালো ফল করেছে তারা ।