দুর্গাপুর, 6 ফেব্রুয়ারি: হিন্দুদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী ৷ প্রতিবছর বসন্ত পঞ্চমীতে তিনি পূজিতা হন ৷ বাঙালিদের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম ৷ তবে বাংলার আদিবাসী সমাজের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু আলাদা ৷ তাঁরা বিদ্যার দেবীর নয়, বিদ্যার দেবতার আরাধনা করেন ৷ সরস্বতীপুজোর দিনকয়েক পরই আদিবাসী সমাজে বিন্দু চাঁন্দান বোঙ্গা বুরুর পুজো হয় (Bidu Chandan Bonga Buru Puja) ৷ তাঁকেই বিদ্যার দেবতা হিসাবে মান্য করেন আদিবাসীরা ৷
বিষয়টি একটু ভেঙে বলা যাক ৷ আদিবাসীদের অলচিকি হরফ বা লিপি আবিষ্কার করেছিলেন পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু ৷ আদিবাসী সমাজ তাঁর এই কৃতিত্বকে সম্মান জানাতেই বিন্দু চাঁন্দান বোঙ্গা বুরুর পুজো করে ৷ রীতিমতো ঘটা করে এই আয়োজন করা হয় ৷ পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের বনশোল এলাকাতেও এই পুজো হয় ৷ সরস্বতীপুজোর মতোই এই পুজোতেও স্কুল, কলেজের ছাত্রীরা পাটভাঙা শাড়ি পরে ৷ নিজেদের সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলে ৷ পুজোয় অঞ্জলি দেওয়া হয় শালপাতা, হলুদ ও গাঁদাফুল দিয়ে ৷ শাল, পিয়ালের জঙ্গলে খোলা আকাশের নীচে হয় এই পুজো ৷ আদিবাসী সম্প্রদায়ের পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজোর বিধি পালন করেন ৷
আরও পড়ুন: আদিবাসীদের শিকার উৎসবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ, উত্তেজনা বর্ধমানে
পুজো উপলক্ষে থাকে আরও নানা আয়োজন ৷ ধামসা-মাদলের বাদ্যি সহযোগে করা হয় শোভাযাত্রা ৷ পুজোর পর উপস্থিত সকলের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয় ৷ থাকে প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলোর ব্যবস্থাও ৷ তাতে ছোটদের পাশাপাশি বড়রাও অংশগ্রহণ করেন ৷ সব মিলিয়ে দিনভর উৎসবের আমেজে মাতেন আদিবাসীরা ৷
এই পুজো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আদিবাসী সমাজের স্থানীয় নেতা রবীন সোরেন বলেন, "আদিবাসী সমাজেও এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে ৷ আগে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা খুব বেশি পড়াশোনা করত না ৷ কিন্তু, এখন তারা স্কুলে যাচ্ছে ৷ অনেকেই উচ্চশিক্ষা লাভ করছেন ৷ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ৷ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারও হচ্ছেন ৷ স্কুলে অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি আদিবাসীদের নিজস্ব লিপি অলচিকিতেও পঠনপাঠন হচ্ছে ৷ আমাদের জন্য এই লিপি আবিষ্কার করেছিলেন রঘুনাথ মুর্মু ৷ তিনি আদিবাসী সমাজের একজন পণ্ডিত ছিলেন ৷ তাঁর সম্মানেই আমরা বিন্দু চাঁন্দান বোঙ্গা বুরুর পুজো করি ৷ এই পুজো একেবারে সরস্বতীপুজোর মতো ৷ বহু বছর ধরে আমরা এই পুজো করে আসছি ৷ কিন্তু, আগে এ নিয়ে তেমন প্রচার হত না ৷ এখন লোকে এই পুজো সম্পর্কে জানছে ৷"
মঙ্গলি হেমব্রম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, "সরস্বতীপুজোর মতোই এই পুজোয় অঞ্জলি দেওয়া হয় ৷ তার জন্য আমরা সকাল থেকে উপবাস করি ৷ পুজোর পর প্রসাদ খেয়ে সেই উপবাস ভাঙা হয় ৷ পুজো নিয়ে বাচ্চাদের মধ্যে সবথেকে বেশি উৎসাহ দেখা যায় ৷