আসানসোল, 21 মার্চ: শহরাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাড়ছে শখের বাগান । করোনাকাল থেকেই মানুষ বাড়ির ছাদে ব্যালকনিতে বাগান তৈরিতে মেতেছেন । নানা রঙবেরঙের ফুল, পাতাবাহার এমনকী সবজি ফলছে বাড়িতেই । সবুজপ্রিয় সচেতন মানুষজন চাইছেন জৈব সারের ব্যবহার (Organic Fertilizers Making)। অন্যদিকে, বাজারেও ক্রেতাদের চাহিদা জৈব সার উৎপাদিত সবজি বা ফসল । রাসায়নিক সার নৈব নৈব চ । ফলে জৈব সারের চাহিদা বাড়ছে । মাত্রাতিরিক্ত দাম ছাড়াও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে ফসল ও সবজির পাশাপাশি ক্ষেতেরও ক্ষতি হয় । আর তাই এ বার কৃষকদেরই জৈব সার তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে (Training for Farmers)।
যাতে তাঁরা সাবলম্বী হয়ে নিজেদের জমির সার নিজেরাই তৈরি করতে পারেন, সে জন্যই এই উদ্যোগ । উদ্বৃত্ত সার তাঁরা শহরে বাগানপ্রেমীদের বিক্রিও করতে পারবেন । আসানসোলের বেসরকারি একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা এমনই উদ্যোগ নিয়েছে । সংস্থার সিএসআর প্রজেক্ট থেকে তাঁরা জামুড়িয়া, বারাবনির বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের জৈব সার তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে (Asansol News)।
কীভাবে তৈরি হবে এই সার ?
মূলত গোমূত্র, গোবর, ঘুঁটের ছাই, অশ্বত্থ কিংবা বটগাছের তলার মাটি, গুড়, রসুন, গাছের পাতা এবং বাড়ির যাবতীয় ফেলে দেওয়া আবর্জনাময় জিনিস দিয়েই তৈরি হচ্ছে জৈব সার ও ভার্মিকম্পোস্ট সার । গ্রামের মানুষ বা চাষীদের বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে গবাদি পশু থাকে । ফলে কোনও জিনিসই তাঁদের খুব একটা কিনতে হয় না । জৈব সার তৈরির প্রশিক্ষক অতীশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, যেখানে জমিতে চাষ করতে দু'হাজার কিংবা তিন হাজার টাকার রাসায়নিক সার কিনতে হত, সেখানে মাত্র 100 টাকা খরচে এই জৈব সার তৈরি করতে পারবেন কৃষকরা । যা খুব সহজ পদ্ধতিতে বাড়িতে বসেই তৈরি করে ফেলা যায় । এই সারের গুণ অবিশ্বাস্য ।
বেশ কয়েকটি জৈব সার ও ভার্মিকম্পোস্ট সার তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে জামুড়িয়ার আনন্দপুর-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে । প্রশিক্ষক অতীশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কৃষকদের প্রচণ্ড উৎসাহ এবং তাঁরা নিজেরাই হাতে কলমে এই সার তৈরি শিখেছেন । কৃষকরা বেশি পরিমাণে এই সার তৈরি করলে নিজেরাও আর্থিক ভাবে উন্নত হবেন ।
আরও পড়ুন: বিকল্প সারের জন্য রাজ্যগুলিকে উৎসাহ দিতে আসছে প্রধানমন্ত্রী প্রণাম যোজনা
কৃষকরাও জানাচ্ছেন, "এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের খুব কাজে লাগবে । সার তৈরিতে যা উপকরণ লাগছে সবই আমাদের বাড়ি থেকেই পাওয়া যায় । দু-একটি সামান্য উপকরণ কিনতে হবে ৷ যে ভাবে শুনলাম এই সার যদি সেই ভাবে কাজ করে, তাহলে আমরা অনেকটাই লাভবান হব ।"
বর্তমান সময়ে শহরাঞ্চলেও বাড়ির মধ্যে বাগান তৈরির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে করোনাকালের পর থেকেই । সে ক্ষেত্রেও জৈব সারের বিরাট চাহিদা । গ্রামাঞ্চলের এই কৃষকরা যদি বেশি পরিমাণে জৈব সার তৈরি করতে পারেন, তাহলে সেটা তাঁরা শহরাঞ্চলে এসে বিক্রিও করতে পারবেন । ফলে একটা আলাদা রোজগারেরও জায়গা থাকছে ।
বেসরকারি ওই বিদ্যুৎ সংস্থার ম্যানেজার তন্ময় হাজরা জানালেন, "কৃষকদের আরও বেশি করে স্বাবলম্বী করে তুলতেই আমাদের সিএসআর প্রজেক্ট দ্বারা আমরা এই ধরনের প্রকল্প বিভিন্ন গ্রামে করছি । আমরা আশা করছি চাষিরা এতে উপকৃত হবেন ।"