দুর্গাপুর, 19 অগাস্ট : কোরোনা সংক্রমণ রুখতে মার্চের শেষে লকডাউন ঘোষণা করে কেন্দ্র । তার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে । দুই মাসের সম্পূর্ণ লকডাউনের জেরে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর নগরনিগমের রাজস্বে ঘাটতি তৈরি হয়েছে । লকডাউনের কারণে কর আদায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে । অনলাইনেও সেই ব্যবস্থা নেই । ফলে উন্নয়নমূলক কাজও থমকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর নগরনিগম । এখানে ওয়ার্ডের সংখ্যা 43 । জনসংখ্যা প্রায় সাত লাখ । নগরনিগমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে টোল ট্যাক্স, বাড়িঘরের ট্যাক্স, স্বাস্থ্য পরিষেবা বাবদ পাওয়া টাকা, জলকর ছাড়াও বিভিন্ন খাতে প্রত্যেক মাসে গড় রাজস্ব আদায় হয় এক কোটি । অর্থাৎ 2019 সালে মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় 5 কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল । কিন্তু এই বছর লকডাউনের কারণে প্রতি মাসে গড় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ 20 লাখ টাকা । সুতরাং মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত 1 কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে । মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস সম্পূর্ণ লকডাউন ছিল । এরপর আনলক শুরু হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি । কারণ কোরোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় জুলাইয়ে দফায় দফায় বন্ধ করে দেওয়া হয় দপ্তর । এরপর অগাস্টে আরও ছয়জনের শরীরে কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় দপ্তর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় । ফলে রাজস্ব আদায়ে অনেকটাই ঘাটতি হবে বলে জানাচ্ছেন দুর্গাপুর নগরনিগমের কমিশনার পষ্পেন্দ্র মিত্র । তিনি বলেন, "খুব সমস্যা দেখা দিয়েছে । এই কয়েক মাস সেরকমভাবে রাজস্ব আদায় হয়নি । আনলক শুরু হওয়ায় জুন মাসে কিছুটা রাজস্ব আদায় হয় । কিন্তু, কোরোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দপ্তর বন্ধ করে দেওয়ায় কর আদায় করা হয়নি । ফলে রাজস্বে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।" একই বক্তব্য, দুর্গাপুর নগরনিগমের মেয়র পারিষদ অমিতাভ বন্দোপাধ্যায়ের । তিনি জানান, বিরাট ক্ষতি হচ্ছে । বিশেষ করে হোল্ডিং ট্যাক্স, ঘরবাড়ির জন্য পৌরসভার অনুমোদনের জন্য আর্থিক আয় কমেছে । আর এতেই উন্নয়নমূলক কাজ একেবারে থমকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ।
দুর্গাপুর নগর নিগমের অর্থ থেকে কী কী কাজ করা হয় ?
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত কাজকর্মের জন্য তাদের পক্ষ থেকেই অর্থ বরাদ্দ করা হয় । কিন্তু, তা ছাড়াও জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে মিউনিসিপাল কর্পোরেশনকে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয় । এই বর্ষার সময় যেমন কোথাও জরুরিকালীন জল নিকাশি ব্যবস্থাকে ঠিক করতে হলে এই খাতের অর্থ থেকেই সেই উন্নয়নের কাজ করাতে হয় । রাজস্ব বাবদ আদায়কৃত অর্থ নগর নিগমের পক্ষ থেকে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কাজে লাগানো হয় । কিন্তু দীর্ঘ লকডাউনের কারণে সেই অর্থ আদায়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে । নগর নিগমের পক্ষ থেকে উন্নয়নের কাজ কোথাও থমকে নেই বলে জানালেও জনগণের থেকে আদায়কৃত অর্থ অর্থাৎ পৌরসভার নিজস্ব ফান্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ করে কোথাও নতুন উন্নয়নমূলক কোনও কাজ করা যাচ্ছে কি ? তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি । তবে বাস্তবিকভাবে সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থের কাজ হলেও , নগরনিগম নিজস্ব অর্থ থেকে কোনও কাজ এখন করতে পারছে না বলেই সূত্র মারফত জানা গেছে ।
কোরোনা পরিস্থিতির মধ্যে এইভাবেই যদি রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থেকে যায় , তাহলে যে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ থমকে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । কারণ নগরনিগমের পক্ষ থেকে কেন্দ্র ও রাজ্যের বরাদ্দ অর্থে প্রকল্পের কাজগুলি চললেও,তাদের নিজস্ব খাতের অর্থ থেকে উন্নয়নমূলক কাজ জরুরি পরিস্থিতিতে কতটা করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিয়েছে ।