কুলটি, 10 এপ্রিল: এ যেন শেষ হয়েও, হইল না শেষ ৷ রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীর পর্ব অতীত মনে করে কিছুটা স্বস্তিতে ছিল রাজ্য প্রশাসন ৷ কিন্তু তাদের কপালে ফের একবার চিন্তার ভাঁজ ৷ এবার মিছিল নয়, রামনবমীর আখড়ায় তরোয়াল হাতে কসরৎ করলেন বিজেপি বিধায়ক। পাশাপাশি রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীর পর এবার হই-হই করে রামনবমী আখড়া উদযাপন করল বিজেপি ৷ আর সেই আখড়াতেই রবিবার অস্ত্র হাতে কসরৎ করতে দেখা গেল কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দারকে ৷ যদিও অস্ত্র প্রদর্শনের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি বিধায়ক ৷
যেখানে রাজ্য়ে ধর্মীয় মিছিল বা শোভাযাত্রায় অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে প্রশাসন, সেখানে রামনবমীর দু'সপ্তাহ পরই ধর্মীয় এক আচারকে কেন্দ্র করে ফের একবার অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা গেল ৷ এবার রামনবমী আখরায় অস্ত্র প্রদর্শন করল বিজেপি ৷ সেখানে খোদ কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দারকে দেখা গেল প্রকাশ্য জন সমক্ষে আখরায় দুটি তরোয়াল একসঙ্গে নিয়ে কসরৎ করতে। মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এই ছবি। আর তা ঘিরেই বিতর্ক দানা বাঁধে। যদিও বিজেপি বিধায়ক বিষয়টিতে কোনও অন্যায় দেখছেন না।
পালটা সাফাই দিয়ে বিধায়ক জানান, সব দেবদেবীর হাতেই অস্ত্র থাকে। অস্ত্রের পুজোও হয়। কুলটি এলাকায় বহু বছরের প্রাচীন রীতি হনুমান জয়ন্তীর পরের রবিবার কুলটিতে রামনবমীর আখড়া সংগঠিত হয়। পাশাপাশি এখানে রাবন দহন অনুষ্ঠানও পালিত হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট আখড়া এসে মিলিত হয়ে একটা বড় আখড়া শোভাযাত্রা করে কুলটি শহর প্রদক্ষিণ করে। কুলটির ইটাপাড়া এলাকা থেকেও এমনি একটি আখড়া বের হয়। সেই আখড়াতেই দেখা যায় কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার তরোয়াল হাতে কসরৎ দেখিয়েছেন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রকাশ্য রাস্তায় তরোয়াল নিয়ে উদ্দাম মাচে মত্ত বিজেপি বিধায়ক ৷ তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেখানে বেশ কিছু নাবালক-নাবালিকারাও উপস্থিত ছিল ৷ তাদের সামনেই অস্ত্র হাতে দেখা যায় বিধায়ককে ৷
রবিবার রাতে হাতে দুটি তরোয়াল নিয়ে বিজেপি বিধায়কের এই কসরৎ ঘিরে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যও ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনের অন্দরেও উদ্বেগ চোখে পড়েছে ৷ রামনবমীর আখড়ায় ইতিমধ্যেই অস্ত্র নিষিদ্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন ৷ তারপরও বিধায়ক অজয় পোদ্দারের এমন কাণ্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্কের ঝড় ওঠে। ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট জোগাড় করতে শুরু করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসনও ৷ অন্যদিকে, ঘটনার দিন রাতেই যোগাযোগ করা হয় বিধায়কের সঙ্গে। বিজেপি বিধায়ক জানান, সব দেবদেবীর হাতেই অস্ত্র থাকে। আখাড়ার পুজোয় অস্ত্রকেও পুজো করা হয়।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেষ্ট গড়ে দাঁড়িয়ে হুঙ্কার শুভেন্দুর
যদিও অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন বিজেপি বিধায়ক ৷ তিনি বলেন, "আমি আখড়ায় অস্ত্র প্রদর্শন করিনি। রাস্তার শোভাযাত্রায় সঙ্গে অস্ত্র রাখা বেরোইনি। যেটা হয়েছে সেটা পাড়ার ভিতরে ৷" অতীতেও একাধিক কাজকর্মে এই বিধায়ককে নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছিল। সম্প্রতি তৃণমূলের পক্ষ থেকে কুলটি এলাকায় বিজেপি বিধায়ক নিখোঁজ বলে পোষ্টারও দেওয়া হয়েছিল। এবার অস্ত্র হাতে দেখা মিলল বিজেপি বিধায়কের।
নিন্দার ঝড় উঠলেও, বিধায়ক নিজে যদিও এই ঘটনায় কোনও অন্যায় দেখছেন না। প্রসঙ্গত, রামনবমীর মিছিল ঘিরে চলতি মাসের শুরুতেই অশান্ত হয়ে ওঠে হাওড়া, হুগলির বেশ কিছু এলাকা ৷ পরিস্থিতি কার্যত হাতের বাইরে চলে যায় প্রশাসনের ৷ দু'পক্ষের সংঘর্ষ এবং সংঘাতের জেরে চরম বিশৃঙ্খলায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা ৷ শেষ পর্যন্ত হনুমান জয়ন্তীর সময় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে হয় রাজ্যকে ৷ এরপর ফের অস্ত্র মিছিলে চিন্তার ভাঁজ প্রশাসনের কপালে ৷