দুর্গাপুর, 2 এপ্রিল: নব্বইয়ের দশকের বেতাজ বাদশা ৷ সেই সময়ের কালো হিরের কালো কারবারি রাজু ঝাকে শনিবার 19 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই বর্ধমানের শক্তিগড়ে গুলি করে খুন করল আততায়ীরা ৷ হত্যার ঠিক আগে গাড়িতে বসে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলেন তিনি ৷ বুলেটবিদ্ধ রাজু ঝায়ের রক্তাক্ত দেহ লুটিয়ে পড়ে গাড়িতেই । তাঁর সঙ্গে থাকা অন্ডালের দক্ষিণখণ্ডের বাসিন্দা ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের হাতে গুলি লাগে ।
মাফিয়া থেকে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা রাজু ঝা কয়লার কালো কারবার থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন ৷ বেআইনি সব কারবার ছেড়ে তিনি ছিলেন শুধু ব্যবসা আর রাজনীতি নিয়ে ৷ ঠিক যেন, 'রাজু বন গয়া জেন্টলম্যান'। আর এটাই কি তাঁর জীবনে ঘনিয়ে আনল চরম বিপদ ?
রাজু ঝায়ের বর্তমানে বিরাট ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য । দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেলের মালিক তিনি । যদিও এই হোটেলটি আইটিসি দ্বারা পরিচালিত । রয়েছে একাধিক বড় বড় ব্যবসা । একসময় এ রাজ্যের আসানসোল, দুর্গাপুর থেকে কলকাতা পর্যন্ত এসি ভলভো বাস পরিষেবা চালু তাঁর হাত ধরেই ।
2011 সালে রাজ্য রাজনীতিতে বিরাট বদল এলে রাজেশ ওরফে রাজু ঝায়ের জীবনও আমূল পরিবর্তিত হয় ৷ কয়লার পুরনো মামলার জেরে তাঁকে বেশ কয়েকবার সিআইডি এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে হয় । বেশ কয়েকবার জেলবন্দি হওয়ার পরেও ফিরে এসে নিজের ব্যবসায়িক কাজ দেখভাল শুরু করেন রাজু । সক্রিয় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তিনি না জড়ালেও, তাঁর "কালো টাকা দক্ষিণবঙ্গের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার হয়েছে" বলে বহু আলোচনা চায়ের টেবিলে বহুবার উঠেছে ।
শেষমেশ 2020 সালে ঠিক বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগেই রাজেশ ওরফে রাজু ঝা তাঁর বহু অনুগামীকে নিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগদান করেন । সেই সময় আওয়াজ উঠেছিল রাজু ঝা বিজেপির প্রার্থী হতে চলেছেন । কিন্তু কোথা থেকে ? আলোচনায় ছিল জামুড়িয়া কেন্দ্রের নাম ৷ কিন্তু তার আগেই বাঁকুড়ায় পুরনো কয়লার একটি মামলাতে তাঁকে গ্রেফতার হতে হয় । বেশ কিছুদিন সংশোধনাগারে কাটিয়ে ফিরে এসে রাজেশ ওরফে রাজু ঝা ফের ব্যবসার কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে তোলেন ।
একসময়ের কালো হিরের কারবারি ধীরে ধীরে নিজের বড় বড় ব্যবসার কাজে নিযুক্ত থেকে নিজেকে "জেন্টলম্যান" হিসেবে তুলে ধরেন ৷ এক সময় রানিগঞ্জের এক চিলতে বস্তির ঘর থেকে উঠে আসা রাজু ঝা হয়ে উঠেছিলেন দক্ষিণবঙ্গের "কুখ্যাত মাফিয়া "। যদিও তাঁকে দেখলে কখনওই খুব "ডাকাবুকো" বলে মনে হত না ।
খুব কম কথা বলা স্বভাবের মানুষটার মৃতদেহ রবিবার যখন দুর্গাপুরের বিধান নগরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়, তখন তাঁর কয়েকশো অনুগামী গোটা বাড়ি ঘিরে রেখেছিলেন । তবে হত্যার দিন সিবিআইয়ের র্যাডারে থাকা গরু পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত আবদুল লতিফের গাড়িতে করে রাজু ঝা কোথায় যাচ্ছিলেন, সেই নিয়ে বহু প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে । কোথায় যাচ্ছিলেন তাঁরা ? কেনইবা যাচ্ছিলেন ? সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ ।
একসময়ে কয়লার কালো কালি গায়ে মাখা রাজু ঝা সমস্ত বেআইনি চক্র থেকে হাত গুটিয়ে তথাকথিত 'জেন্টলম্যান' হয়ে উঠেছিলেন ৷ সেটাই কি তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ ? তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷
আরও পড়ুন: রাজু ঝা খুনকাণ্ডে দুষ্কৃতীদের গাড়ির নম্বর ভুয়ো, পরিকল্পিত খুন বলে অনুমান পুলিশের