দুর্গাপুর, 4 নভেম্বর: সম্প্রতি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দুর্গাপুর ৷ এবার রাষ্ট্রায়ত্ত দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের (DVC) উচ্ছেদ নোটিশকে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠল দুর্গাপুরের 36 নম্বর ওয়ার্ডের ডিটিপিএস মায়াবাজার এলাকা ৷ শনিবার ময়াবাজার হ্যানিম্যান সরণি অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের ৷ পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন 36, 37 ও 38 নম্বর ওয়ার্ডে ডিভিসি-র জমি দখল করে বসবাসকারীরা ৷ এ দিন সেই রাস্তা অবরোধ তুলতে গিয়ে দুর্গাপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে বচসায় জড়ান বস্তিবাসীরা ৷ সেখানেই আন্দোলনকারীদের মুখে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে প্রবল সমালোচনা শোনা গেল ৷
শনিবার সকালে ডিভিসি ডিটিপিএস কর্তপক্ষের 4-5 জনের একটি দল কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে, জবরদখল করা জমি অবিলম্বে খালি করার কথা প্রচার করে ৷ এর পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা ৷ পথে বসে অবরোধ শুরু করেন বস্তিবাসীরা ৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দুর্গাপুর থানার পুলিশ ৷ আন্দোলনকারীদের হঠাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান তাঁরা ৷ মূলত, মহিলারা পুলিশ ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ৷ একই সঙ্গে 37 নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর স্বরূপ মণ্ডলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেয় এলাকাবাসীরা ৷
ডিভিসির নতুন 800 মেগা ইউনিট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্যই জমি প্রয়োজন ৷ সেই কারণেই জবরদখলকারীদের উচ্ছেদের নোটিশ ধরায় ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ৷ উচ্ছেদের আশঙ্কায় ভোগা সাধারণ মানুষের বক্তব্য, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন না দিলে তারা জায়গা ছাড়বে না ৷ বিগত 50-60 বছর ধরে প্রায় 5 হাজার পরিবারের বসবাস সেখানে ৷ ডিভিসি ডিটিপিএস-এর হঠাৎ দেওয়া উচ্ছেদের নোটিশে ঘুম উড়েছে বস্তিবাসীদের ৷ স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সরণাপন্ন হয়েও মেলেনি কোনও সুরাহা ৷ অভিযোগ তার বদলে মিলেছে হুমকি ৷
আরও পড়ুন: দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার প্রাচীর তৈরি ঘিরে রণক্ষেত্র, লাঠিচার্জ সিআইএসএফের
এ দিন প্রায় একঘণ্টা ধরে অবরোধ চলে ৷ কল্যাণী মহান্ত, নন্দিতা অঙ্কুররা বলেন, "আমরা দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এই এলাকায় বাস করছি ৷ আমরা এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর স্বরূপ মণ্ডল যা যা বলেছিলেন সব শুনেছি ৷ তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন পানীয় জল এনে দেওয়ার ৷ আমাদের ঘরবাড়ি করে দেওয়ার ৷ আমাদের কাছ থেকে 200 টাকা করে চাঁদাও নেওয়া হয়েছিল ৷ আমাদেরকে দিয়ে একটি ফর্ম ফিলাপ করানো হয়েছিল ৷ কিন্তু, আজ আর কেউ আমাদের সঙ্গে নেই ৷ আমরা শিল্পের বিরোধী নই ৷ আমরাও চাই কারখানা হোক ৷ কিন্তু, আগে আমাদেরকে পুনর্বাসন দেয়া হোক ৷"
আরও পড়ুন: ডিএসপি কারখানার জমি থেকে উচ্ছেদের নোটিশ ঘিরে দড়ি টানাটানি বিজেপি-তৃণমূলের
উচ্ছেদ বিতর্ক নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে ৷ শাসকদলের নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, "এতদিনে মোদি সরকারের ঘুম ভাঙলো ? ভোটের আগে উচ্ছেদ নিয়ে নাটক করতে চাইছে বিজেপি ৷ এই উচ্ছেদে কাজে লাগিয়ে আসলে তারা ভোট বাক্স ভরাতে চাইছে ৷" অন্যদিকে, দুর্গাপুরের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলর স্বরূপ মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, "মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই কাউন্সিলর ৷ এতদিন পর্যন্ত দুর্গাপুরের শিল্প বন্ধ হয়েছে ৷ এখন যখন কেন্দ্রীয় সরকার শিল্প গড়তে চাইছে, তখন উচ্ছেদ অভিযানের নামে কিছু মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে ফায়দা তুলতে চাইছে শাসকদল ৷"
দুর্গাপুরে জমি জটে তাহলে কি আটকে যাবে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও ডিভিসি তাপবিদ্যুৎ কারখানার সম্প্রসারণের কাজ ? দুর্গাপুরের বেকার যুবকদের চাকরি এবং শিল্প শহরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এই কারখানাগুলোর সম্প্রসারণ কি হবে না ? এমন প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ ৷