ETV Bharat / state

Kanksa Tribal Women: কাঁকসার জঙ্গলমহলের লক্ষ্মীদের দুর্দশার বারোমাস্যা, অর্ধাহারে কাটছে দিন - Kanksa tribal village

পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার জঙ্গলমহলের আদিবাসী পাড়ায় অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা ৷ এখানে নেই পুজোর আনন্দ, ঘরের লক্ষ্মীর দিন কাটে আধপেটা খেয়ে ৷

ETV Bharat
অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে দিন
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 28, 2023, 10:25 PM IST

কাঁকসার জঙ্গলমহলে অর্ধাহারে দিন গুজরান মহিলাদের

দুর্গাপুর, 28 অক্টোবর: কোজাগরী লক্ষ্মী পুজার দিনেও এ এক মন খারাপ করার মতো ছবি । লুচি, মিষ্টি, ফলমূল, অন্ন ভোগ সহকারে যখন লক্ষ্মীর আরাধনায় বাংলার ঘরে বেজে উঠছে শাঁখ, কাঁসর, ঘণ্টা, পড়া হচ্ছে পাঁচালি দেওয়া হচ্ছে উলু, তখন কাঁকসার জঙ্গলমহলের লক্ষ্মীরা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন । কেন্দ্র টাকা না পাঠানোয় বন্ধ 100 দিনের কাজ, চাষাবাদের অবস্থাও সংকটজনক, জঙ্গলের শালপাতার যোগান কমেছে । এমতাবস্থায় পান্তা ভাত, লঙ্কাপোড়া বা শাক তুলে তা সেদ্ধ করে উদরপূর্তি ঘটছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই মহিলাদের । ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় লক্ষ্মীপুজোর দিন সকালে কাঁকসার জঙ্গলমহলের এই দুর্দশার ছবি উঠে এল।

সরকারি সহায়তা অনেক, এরাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনকল্যাণমুখী বহু প্রকল্প চালু করেছেন। কিন্তু বাস্তবে জঙ্গলমহলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ধুঁকতে থাকা পরিবারগুলির কাছে সেই জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের সুবিধা কি পৌঁছচ্ছে ? সাড়ম্বরে দুর্গা এসে আবারও পাড়ি দিয়েছেন কৈলাসে, আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ৷ এরপর শক্তির আরাধনায় মেতে উঠবেন বাংলার লক্ষ্য-কোটি মানুষ । কিন্তু জঙ্গলমহলের সোনালী মুর্মু, নিয়তি সোরেনের কথা কে শুনবে ? ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি খোঁজ নিতে গিয়ে তাঁদের দুর্দশার বারোমাস্যার কাহিনী শুনতে পেলেন ।

ভোটের আগে আগে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গাল ভরা আশ্বাস আর ভোট পেরিয়ে গেলেই সেই সমস্ত নেতাদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে এল সোনালী মুর্মু, নিয়তি সোরেনদের মুখে । আদিবাসী রমণী সোনালী মুর্মুর কথায়, "চরম অর্থ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে আমদের । ঋণ-দেনাতে জর্জরিত । জঙ্গলের শাক তুলে তা সেদ্ধ করে কোনও দিন ভাত খাই, কখনও একবেলা খেয়ে, আর একবেলা না-খেয়ে দিন কাটাচ্ছি । 100 দিনের কাজ অনেকদিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । চাষের কাজেও ডাক পাচ্ছি না। কী করে দিন কাটাব এ কথা ভাবতে ভাবতেই দিন চলে যাচ্ছে । কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসে না।"

আরও পড়ুন: মূর্তি কেনায় বিমুখ ক্রেতারা, লক্ষ্মীলাভে ধন্ধে পটুয়া পাড়ার মৃৎ শিল্পীরা

এই একই কথার সঙ্গে সঙ্গে নিয়তি সোরেনের আক্ষেপ, "দুর্গাপুজো গেল, আজ লক্ষ্মীপুজো, এরপরে কালীপুজা হবে ৷ অনেকদিন আগে একটা শাড়ি পেয়েছিলাম । আমাদের নতুন কাপড় কেনার ক্ষমতা নেই । পেটের খাবার জুটছে না । মাড়ভাত আর শাক সেদ্ধ খেয়ে দিন কাটাচ্ছি । আমাদের আবার পুজো কোথায় ?" উৎসবের মরশুম, কিন্তু কাঁকসার জঙ্গলমহল অভাবের অন্ধকারে এই সমস্ত উৎসব ঘনঘটা থেকে ব্রাত্য। লক্ষ্মীর উপাসনায় যখন ব্যস্ত গহস্থ, তখন জঙ্গলমহলের এই লক্ষ্মীরা কী করে সন্তানদের মুখে দুবেলা দুমুঠো অন্ন তুলে দেবেন তার দুশ্চিন্তায় কাটাচ্ছেন প্রতিটা মুহূর্ত । ধনদেবীর কৃপা থেকে বঞ্চিত এরা। এদের জীবন আজ ঘন জঙ্গলের ঘন অন্ধকারে ডুবে আছে ।

কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রবোধ মুখোপাধ্যায় এই বিষয়ে জানান, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার 100 দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। গরিব মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নিয়েছে ওরা। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে ৷ বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের সুবিধা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হয় ৷

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুজোতেই ফেরেন বাসিন্দারা! বছরভর জনশূন্য় থাকে এই 'ভূতের গ্রাম'

কিন্তু কোজাগরী লক্ষ্মীপুজার দিনে সোনালী মুর্মু, নিয়তি সোরেনদের মতো মায়েরা তাঁদের দুর্দশার যে কথা তুলে ধরলেন ইটিভি ভারতের ক্যামেরা সামনে, তাতে একটা কথা স্পষ্ট স্বাধীনতার 75 বছর পরেও এদেশের আদি বাসিন্দারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে ৷ দু'মুঠো অন্ন সংস্থান এখনও তাঁদের কাছে এক সংগ্রামের মতো ৷

কাঁকসার জঙ্গলমহলে অর্ধাহারে দিন গুজরান মহিলাদের

দুর্গাপুর, 28 অক্টোবর: কোজাগরী লক্ষ্মী পুজার দিনেও এ এক মন খারাপ করার মতো ছবি । লুচি, মিষ্টি, ফলমূল, অন্ন ভোগ সহকারে যখন লক্ষ্মীর আরাধনায় বাংলার ঘরে বেজে উঠছে শাঁখ, কাঁসর, ঘণ্টা, পড়া হচ্ছে পাঁচালি দেওয়া হচ্ছে উলু, তখন কাঁকসার জঙ্গলমহলের লক্ষ্মীরা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন । কেন্দ্র টাকা না পাঠানোয় বন্ধ 100 দিনের কাজ, চাষাবাদের অবস্থাও সংকটজনক, জঙ্গলের শালপাতার যোগান কমেছে । এমতাবস্থায় পান্তা ভাত, লঙ্কাপোড়া বা শাক তুলে তা সেদ্ধ করে উদরপূর্তি ঘটছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই মহিলাদের । ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় লক্ষ্মীপুজোর দিন সকালে কাঁকসার জঙ্গলমহলের এই দুর্দশার ছবি উঠে এল।

সরকারি সহায়তা অনেক, এরাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনকল্যাণমুখী বহু প্রকল্প চালু করেছেন। কিন্তু বাস্তবে জঙ্গলমহলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ধুঁকতে থাকা পরিবারগুলির কাছে সেই জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের সুবিধা কি পৌঁছচ্ছে ? সাড়ম্বরে দুর্গা এসে আবারও পাড়ি দিয়েছেন কৈলাসে, আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ৷ এরপর শক্তির আরাধনায় মেতে উঠবেন বাংলার লক্ষ্য-কোটি মানুষ । কিন্তু জঙ্গলমহলের সোনালী মুর্মু, নিয়তি সোরেনের কথা কে শুনবে ? ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি খোঁজ নিতে গিয়ে তাঁদের দুর্দশার বারোমাস্যার কাহিনী শুনতে পেলেন ।

ভোটের আগে আগে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গাল ভরা আশ্বাস আর ভোট পেরিয়ে গেলেই সেই সমস্ত নেতাদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে এল সোনালী মুর্মু, নিয়তি সোরেনদের মুখে । আদিবাসী রমণী সোনালী মুর্মুর কথায়, "চরম অর্থ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে আমদের । ঋণ-দেনাতে জর্জরিত । জঙ্গলের শাক তুলে তা সেদ্ধ করে কোনও দিন ভাত খাই, কখনও একবেলা খেয়ে, আর একবেলা না-খেয়ে দিন কাটাচ্ছি । 100 দিনের কাজ অনেকদিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । চাষের কাজেও ডাক পাচ্ছি না। কী করে দিন কাটাব এ কথা ভাবতে ভাবতেই দিন চলে যাচ্ছে । কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসে না।"

আরও পড়ুন: মূর্তি কেনায় বিমুখ ক্রেতারা, লক্ষ্মীলাভে ধন্ধে পটুয়া পাড়ার মৃৎ শিল্পীরা

এই একই কথার সঙ্গে সঙ্গে নিয়তি সোরেনের আক্ষেপ, "দুর্গাপুজো গেল, আজ লক্ষ্মীপুজো, এরপরে কালীপুজা হবে ৷ অনেকদিন আগে একটা শাড়ি পেয়েছিলাম । আমাদের নতুন কাপড় কেনার ক্ষমতা নেই । পেটের খাবার জুটছে না । মাড়ভাত আর শাক সেদ্ধ খেয়ে দিন কাটাচ্ছি । আমাদের আবার পুজো কোথায় ?" উৎসবের মরশুম, কিন্তু কাঁকসার জঙ্গলমহল অভাবের অন্ধকারে এই সমস্ত উৎসব ঘনঘটা থেকে ব্রাত্য। লক্ষ্মীর উপাসনায় যখন ব্যস্ত গহস্থ, তখন জঙ্গলমহলের এই লক্ষ্মীরা কী করে সন্তানদের মুখে দুবেলা দুমুঠো অন্ন তুলে দেবেন তার দুশ্চিন্তায় কাটাচ্ছেন প্রতিটা মুহূর্ত । ধনদেবীর কৃপা থেকে বঞ্চিত এরা। এদের জীবন আজ ঘন জঙ্গলের ঘন অন্ধকারে ডুবে আছে ।

কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রবোধ মুখোপাধ্যায় এই বিষয়ে জানান, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার 100 দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। গরিব মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নিয়েছে ওরা। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে ৷ বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের সুবিধা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হয় ৷

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুজোতেই ফেরেন বাসিন্দারা! বছরভর জনশূন্য় থাকে এই 'ভূতের গ্রাম'

কিন্তু কোজাগরী লক্ষ্মীপুজার দিনে সোনালী মুর্মু, নিয়তি সোরেনদের মতো মায়েরা তাঁদের দুর্দশার যে কথা তুলে ধরলেন ইটিভি ভারতের ক্যামেরা সামনে, তাতে একটা কথা স্পষ্ট স্বাধীনতার 75 বছর পরেও এদেশের আদি বাসিন্দারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে ৷ দু'মুঠো অন্ন সংস্থান এখনও তাঁদের কাছে এক সংগ্রামের মতো ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.