আসানসোল, 4 জানুয়ারি: পাঁচের দশকে বেসরকারি শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে আলো এসেছিল আসানসোলের প্রান্তিক এলাকায় । হীরাপুরে দামোদরের তীরে গড়ে উঠেছিল ঢাকেশ্বরী কটন মিল (Dhakeswari Cotton Mills)। সেই কারখানাকে কেন্দ্র করেই সূর্যনগর আবাসন কলোনী, ঢাকেশ্বরী এলাকা ও আশেপাশের গ্রামগুলির আর্থ সামাজিক উন্নতি হয়েছিল । কিন্তু অল্প কয়েকবছরেই শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্ব এবং লাগাতার ক্ষতির মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটি । ফের অন্ধকার নেমে আসে গোটা এলাকায় ।
কারখানার দেওয়ালগুলি ছাড়া দুষ্কৃতীরা সবই প্রায় লুট করে নেয় । পোড়ো বাড়ির মতো এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে কারখানার মূল ভবন ও আবাসনগুলি । এবার সেখানেই আশার সঞ্চার হয়েছে । ঢাকেশ্বরী কটন মিলের 193 একর জমি রাজ্য সরকার শিল্প দফতরকে হস্তান্তরিত করেছে বলে খবর । ক্যাবিনেটে আলোচনায় স্থির হয়েছে ঢাকেশ্বরীতে গড়ে উঠবে নতুন শিল্পতালুক । আর এই ঘোষণার পরেই আলোর সম্ভাবনা দেখছেন এলাকাবাসীরা ।
বাংলাদেশের ঢাকা জেলার নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীর তীরে বাঙালি ব্যবসায়ী সূর্যকুমার বসুর উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল ঢাকেশ্বরী কটন মিল । তাঁর সেখানে দুটি কারখানা ছিল । কিন্তু দেশভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকার সূর্যকুমার বসুর কাপড়ের কলগুলিকে বলপূর্বক অধিগ্রহণ করে । যে কারণে তিনি বাধ্য হয়ে ভারতে চলে আসেন । একই ভাবে হীরাপুরের চাপড়াইদ গ্রামের কাছে পাঁচের দশকে গড়ে ওঠে ঢাকেশ্বরী কটন মিল । রাজ্য সরকারের তরফেই সূর্যকুমার বসুকে জমি প্রদান করা হয়েছিল বলে জানা যায় ।
1952 সাল থেকে সফলভাবে ঢাকেশ্বরী কটন বস্ত্র উৎপাদন শুরু করে । কারখানা স্থাপনের ফলে গড়ে ওঠে কর্মীদের আবাসন কলোনি যা সূর্যনগর নামে নামাঙ্কিত হয় । এই কারখানায় মোটা কাপড়, ধুতি, গেঞ্জি তৈরি হত বলে স্থানীয় মানুষরা জানিয়েছেন । কিন্তু কারখানা স্থাপনের গোড়ার থেকেই আর্থিক সংকটে জর্জরিত ছিলেন সূর্যকুমার বসু বলে জানা গিয়েছে । বেতন বাকি থাকতে শুরু করে কর্মীদের । বকেয়া পাওনা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয় । শ্রমিক অসন্তোষ ও আর্থিক সংকট-সহ আরও বিভিন্ন কারণের জন্য মাত্র প্রায় দশ বছর কারখানাটিকে চালু রাখা সম্ভব হয়েছিল । 1963 সালে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকেশ্বরী কটন মিল ।
আরও পড়ুন: রিমা-রিয়াকে খড়কুটো করে বাঁচছেন 'অনাথ' বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, চর্চায় আসানসোলে বোনেদের তৈরি বৃদ্ধাশ্রম
বর্তমানে শ্মশানভূমি হয়ে পড়ে রয়েছে ঢাকেশ্বরী কটন মিল । তবে রাজ্য সরকার পূনরায় এই জমি অধিগ্রহণ করে শিল্পদফতরকে হস্তান্তরিত করেছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক (Minister Moloy Ghatak) । এবার সেখানেই নতুন শিল্প গড়ে তুলতে চাইছে সরকার (new industries on land of Dhakeswari Cotton Mills) । আবার নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে ঢাকেশ্বরী এলাকায় । এলাকার কাউন্সিলর থেকে স্থানীয় মানুষজন জানিয়েছেন, নতুন করে শিল্প হলে ওই এলাকার আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে ।