আসানসোল, 22 নভেম্বর: দেশের মধ্যে আবর্জনাময়, অপরিচ্ছন্ন শহরের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল আসানসোলের নাম । কল-কারখানা ও খনির কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শহরের দূষণও । রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে দুষিত শহর বলা হয় আসানসোলকে । তবু এই শহরেও ফুল ফোটে । এই শহরেও শীতের মরশুম এলেই ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখিরা । গত একবছরে আসানসোলে ব্যতিক্রমী পরিযায়ী পাখিদের (Migratory Birds) আনাগোনা চোখে পড়েছে । উড ওয়ারবলারের (Wood Warbler, Phylloscopas sibilatrix) মতো পাখি ভারতে লাদাখের পরে আসানসোলেই দেখা গিয়েছে । দেখা যাচ্ছে আরও অনেক প্রজাতির পাখি (Migratory Birds in Asansol)।
আসানসোলের ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার ও পাখি প্রেমী সত্যজিৎ রায় । বন্ধু চিত্রগ্রাহক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আসানসোলের গুঞ্জন পার্কে ছবি তুলছিলেন ৷ সেই সময় একটি বিশেষ প্রজাতির ওয়ারবলার (Warbler) পাখির ছবি তিনি তোলেন । পাখিটিকে বিশেষ প্রজাতির মনে করে তিনি তার পরিচয় (Birds Identity) জানতে বিভিন্ন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি গ্রুপে পোস্ট করেন । তাতেই তোলপাড় হয় । শেষ পর্যন্ত বহু ছবি তুলে, পাখিটির ঠোঁট থেকে লেজ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে, দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা শেষে পাখিটির ডাক রেকর্ড করার পর ভারতের তামাম পক্ষীবিদ ও চিত্রগ্রাহকরা স্বীকৃতি দেন যে পাখিটি উড ওয়ারবলার (Wood Warbler, Phylloscopas sibilatrix)।
সত্যজিৎ রায়ের দাবি, এই পাখিটি দেখতে পাওয়ার সম্ভাব্য দ্বিতীয় রেকর্ড হয়েছে আসানসোলে । এর আগে পাখিটিকে লাদাখে দেখা গিয়েছিল । এই পাখি রাশিয়ার পশ্চিমে উড়াল পর্বতমালায় দেখা যায় । এত দূরে কীভাবে এই পাখি এল তা নিয়ে আশ্চর্য হয়েছেন পক্ষী বিশারদরা ।
তবে শুধু উড ওয়ারবলার নয়, ই-বার্ড (E-Bird) পোর্টালে আসানসোলের বিশিষ্ট ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার অজয় কুমার দাঁয়ের তোলা ওয়েস্টার্ন ওয়াগটেইল (বীমা) পাখির ছবি গর্বের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে । এই পাখিটিও আসানসোলে দেখা গিয়েছে । ওয়াগটেইলের বেশ কয়েকটি প্রজাতি আসানসোলে গত কয়েকবছর দেখা যাচ্ছে বলে অজয় কুমার দাঁ জানিয়েছেন ।
আরও পড়ুন: শীত পড়তেই ঘাটালে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা শুরু
অন্যদিকে আসানসোলের আরও এক ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার সপ্তর্ষী মুখোপাধ্যায় জানান, ব্যতিক্রমী পাখি আসানসোলে যা দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে হিমালয়ান ব্লু টেইল, স্মল নিলটোভা, কমন টার্ন আবার রোজি পিপিটের মত পাখিও দেখা যাচ্ছে আসানসোলে ।
কিন্তু আসানসোলের মতো দূষিত শহরে কী ক'রে এত পাখি আসছে ? ফটোগ্রাফার সত্যজিৎ রায়ের মতে, আসানসোল বা এই জেলায় দুপাশে দুটি নদী আছে । দামোদর এবং অজয় । প্রচুর গ্রিন ফিল্ড আছে, গ্র্যস ফিল্ড আছে এবং নদীর তট রয়েছে । নদীর এই বালির তটেই বেশি পরিমাণে ব্যতিক্রমী পাঠিয়ে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ।
সপ্তর্ষি মুখোপাধ্যায় জানান, "প্রচণ্ড শীত সহ্য করতে না পেরে পাখিগুলি নেমে আসে, তারা যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়, তখন বিশ্রামের জন্য বেশ কিছুদিন দাঁড়ায় । সে ক্ষেত্রে তাদের এই দামোদরের চর বেশি নিরাপদ বলে মনে হয়েছে ।" তবে ফটোগ্রাফারদের দাবি, পাখি চিরকালই আসে । তখন খোঁজার চোখ কম ছিল । এখন পাখিপ্রেমী ফটোগ্রাফারদের সংখ্যা বাড়ছে । আগে যেখানে একজন দুজন আসানসোলে পাখির ছবি তুলতেন, সেখানে এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় 35 জন । ফলে প্রচুর পরিমাণে পাখির ছবি উঠছে এবং তাদের চেনা যাচ্ছে নতুন করে ।
তবে একদিকে যেমন নতুন পাখি আসছে তেমনি অন্যদিকে পূর্বে যে পরিমাণে সাইবেরিয়ান হাঁস আসতো তারা, ধীরে ধীরে কমে আসছে মানুষের অসচেতনতার জন্য । পাখিপ্রেমী ফটোগ্রাফাররা জানাচ্ছেন, "গুঞ্জন পার্ক-সহ আসানসোলের যে সমস্ত এলাকায় পাখি আসতো, সেখানে ছট পুজোর সময় অতিরিক্ত শব্দে মাইক বাজানো এবং পিকনিকের মরসুমে তারস্বরে ডিজের আওয়াজ পাখিদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । তারা ভয়ে কয়েক বছর ধরেই মুখ ফেরাচ্ছে আসানসোল শহর থেকে । আমরাই বিষয়টি প্রশাসনের নজর এনেছি ।"