দুর্গাপুর, 22 সেপ্টেম্বর : বিদ্যুৎ বাঁচাতে স্মার্ট LED তৈরি করল CMERI (সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট) দুর্গাপুর । অত্যাধুনিক সেন্সররের সাহায্যে যার ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরচ অনেকটাই কমবে বলে আশাবাদী CMERI-এর বিজ্ঞানীরা । তাঁদের বক্তব্য, এই "স্মার্ট ডিমাবেল LED স্ট্রিট লাইট সিস্টেম"-এর জন্য প্রায় 60 শতাংশ বিদ্যুৎ বাঁচানো যাবে । তৈরির পর ছ'মাস পরীক্ষামূলকভাবে CMERI-র একটি কলোনিতে ব্যবহার করা হয় । সেখানে সফল হওয়ার পর গতকাল হাওড়ায় বেসরকারি একটি সংস্থার হাতে এগুলি তুলে দেওয়া হয় ।
স্ট্রিট লাইটের ক্ষেত্রে LED-র ব্যবহার নতুন বিষয় নয় । ডিমাবেল LED লাইট বিষয়টিও নতুন নয় । তবে, স্ট্রিট লাইটের ক্ষেত্রে ডিমাবেল LED-র ব্যবহার তুলনামূলক নতুন বিষয় । আর পাঁচটা LED-র তুলনায় কী কী আলাদা সুবিধা রয়েছে এই নয়া প্রযুক্তিতে?
এখন বাজারে বহু নামীদামি কম্পানির LED লাইট পাওয়া যায় । পঞ্চায়েত থেকে পৌরসভা এমনকী বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে গড়ে ওঠা স্যাটেলাইট টাউনশিপ থেকে বড় বড় আবাসনযুক্ত কলোনির রাস্তায় এখন LED লাইটের ব্যবহার হয়ে থাকে । ডিমাবেল LED এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ খরচ কমায় এটা মোটামুটি সকলেই জানে । সম্প্রতি তাই দেশজুড়ে এর কদর অনেকটাই বেড়েছে । দুর্গাপুরের CMERI-এর পাঁচজন বিজ্ঞানী গত একবছর ধরে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে আবিষ্কার করেছে এই "স্মার্ট ডিমাবেল LED স্ট্রিট লাইট সিস্টেম ।" এই LED লাইটগুলির সঙ্গে থাকছে একটি করে সেন্সর ডিভাইস । যে সেন্সর ডিভাইসের কারণে এই LED আলোগুলি আরও অতিরিক্ত 60 শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে সক্ষম । 100 মিটার দৈর্ঘ্যে ও 25 ফুট প্রস্থে এর সেন্সর কাজ করবে । এতে এমনি সময়ে আলোগুলি কম উজ্জ্বল থাকবে । একাধিক ক্ষেত্রে সেন্সরের কারণে সেটি জ্বলে উঠবে । কিছুক্ষণ স্থায়ী হয়ে ফের আলো কমে যাবে ।
ডিমাবেল প্রযুক্তির এই ডিভাইস বিদ্যুৎখুঁটির মাটি থেকে 10-12 ফুট উঁচুতে লাগাতে হবে । এইভাবে সব খুঁটিতে লাগানো সেন্সর ডিভাইসটি লাগানোর পর যেমন একটি সুইচ দিয়ে আলো জ্বালানো হয় সেভাবে সন্ধ্যায় জ্বালিয়ে দিতে হবে । এবার ডিভাইসে প্রোগ্রামিং করা যেতে পারে সময় । ঠিক কতক্ষণ এই আলো ডিম বা হালকা হয়ে থাকবে এবং কতোক্ষণ পুরোপুরি জ্বলবে সেটা পূর্বে নির্ধারিত করা যেতে পারে । ১০ সেকেন্ড, ২০ সেকেন্ড, ৩০ সেকেন্ড বা 40 সেকেন্ডের প্রোগ্রামিং হতে পারে । ধরা যাক যে ৩০ সেকেন্ডের প্রোগ্রামিং করা হয়েছে । তাহলে ৩০ সেকেন্ড পর এই LED আলোগুলি মৃদু আলো দেবে । এবার ওই রাস্তায় যখন কোনও ব্যক্তি যানবাহন নিয়ে অথবা হেঁটে যাবেন তখনই সেই আলোগুলির উজ্জ্বলতা বেড়ে যাবে ।
এতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে । এদিকে, ডিভাইসগুলির সঙ্গে প্রোগ্রামিং করা থাকবে কিছু মোবাইল নম্বর । যাঁরা এগুলির দেখভাল করবেন তাঁদের নম্বর । যদি একটি কলোনির ৩ নম্বর স্ট্রিটের ১৬ নম্বর খুঁটির আলো না জ্বলে তাহলে 1 নম্বর ফোন নম্বর যেটা দেওয়া থাকবে তাতে মেসেজ যাবে যে ওই বাতি জ্বলছে না । যদি ওই ব্যাক্তি তা দেখেও না ব্যবস্থা নেন তাহলে দ্বিতীয় অর্থাৎ ওই ব্যক্তির ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির মোবাইলে এবং তার সাত দিন পর ওই দুই ব্যক্তির আরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মোবাইলে মেসেজ যাবে । অর্থাৎ কেউ গিয়ে অভিযোগ না জানালেও অভিযোগ চলে যাবে । জেনে যাবে কর্তৃপক্ষ ।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই LED আলোর ফাইল গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয় হাওড়ার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্ণধারের হাতে । দুর্গাপুরের CMERI-এর পাঁচজন বিজ্ঞানীর একবছরের এই গবেষণায় খরচ হয়েছে মাত্র তিন লাখ । তৈরি করার পর প্রথম ছ'মাস সেগুলি পরীক্ষার জন্য লাগানো হয় দুর্গাপুরের CMERI কলোনির রাস্তায় ।
শীঘ্রই এই অত্যাধুনিক LED বাজারে এলে বাজিমাত করবে বলে আশাবাদী CMERI -এর ডিরেক্টর ডঃ হরিশ হিরানি । তাঁর মতে, "এখন দেখার স্ট্রিট লাইটের এই নয়া মডেল দেশকে বিদ্যুৎ খরচ বাঁচানোর ক্ষেত্রে নয়া পথ দেখাতে পারে কি না । ব্যাটারিতেও চালানো যাবে এই 20 ওয়াটের আলো এবং আগামীদিনে সৌরবিদ্যুতের সাহায্যেও চালানো যায় কি না তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে ।"