রানিগঞ্জ, 12 সেপ্টেম্বর: কেউ সেই সত্যি ঘটনা দেখেছেন নিজের চোখে । কেউ বা শুনেছেন পরিবারের কাছে । মহাবীর খনির সেই রোমহর্ষক দুর্ঘটনা । কাকতালীয় ভাবে এরা আজ সবাই সেই ইসিএলের কুনুস্তরিয়া এরিয়ার কর্মী । আর সেই ঘটনা নিয়ে যখন চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, তখন সেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ মিলেছে এমনই বেশ কয়েকজন খনি কর্মীর । অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই মুক্তি পাওয়ার কথা অক্ষয় কুমার অভিনীত ছবি 'মিশন রানিগঞ্জ'। আর এই চলচ্চিত্র নিয়ে উত্তেজনায় ফুটছেন রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চলের শ্রমিক ও বাসিন্দারা ।
1989 সালের 11 নভেম্বর ইসিএলের কুনুস্তরিয়া এরিয়ার রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে ঘটেছিল ভয়াবহ দুর্ঘটনা । গভীর রাতে মহাবীর খনিতে জল ঢুকে গিয়েছিল । যাতে 6 জন শ্রমিক ভেসে যান । 65 জন শ্রমিক খনির মধ্যে আটকে ছিলেন । এরপর ইসিএলের উদ্যোগে বিশেষ ক্যাপসুল তৈরি করা হয় । সেই ক্যাপসুলে খনির ভিতরে নেমেছিলেন খনি ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত গিল ।
15 নভেম্বর রানিগঞ্জের নারায়ণকুড়ি এলাকায় বিশেষ বোর হোলের মাধ্যমে ক্যাপসুলের ভিতর দিয়ে খনিতে নামেন যশবন্ত সিং গিল । অসীম দুঃসাহসে তিনি একের পর এক শ্রমিকদের উদ্ধার করে ওই ক্যাপসুল দিয়ে ওপরে পাঠান । 65 জন শ্রমিককে উদ্ধারের পর নিজে উঠে আসেন খনি গর্ভ থেকে । এই ঘটনার পর জাতীয় বীরের উপাধি পান যশবন্ত গিল । দেশের বিভিন্ন জায়গায় বীরের সম্মান পেয়েছেন তিনি ।
আজও ইসিএলের কুনুস্তরিয়া এরিয়া অফিসে সেই ঐতিহাসিক ক্যাপসুল সংরক্ষিত করে রাখা রয়েছে । যদিও বছর তিনেক আগে পঞ্জাবে মৃত্যু হয়েছে যশবন্ত সিং গিলের । মহাবীর খনির সেই দুর্ঘটনা ও উদ্ধারকাজ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে । যার নাম প্রথমে ছিল ক্যাপসুল গিল । বর্তমানে নাম পালটে করা হয়েছে মিশন রানিগঞ্জ । ইতিমধ্যেই টিজার বেরিয়েছে ওই চলচ্চিত্রের । 6 অক্টোবর মুক্তি পাবে এই ছবি ।
আরও পড়ুন: অক্ষয় এবার বীর গিল সাহেব, বড় পর্দায় রানিগঞ্জের মহাবীর খনির বিপর্যয়
একদিকে যখন এই ছবি নিয়ে কয়লাঞ্চলের বাসিন্দারা খুব উৎসাহিত, তখন অন্যদিকে জানা গেল ইসিএলের যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছিল সেই কুনুস্তরিয়া এরিয়ার অনেক খনি কর্মীও এই ফিল্মে অভিনয় করেছেন । ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে সেই খনি কর্মীদের মধ্যে সুবীর শংকর চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্বেষা রায় গোস্বামী, মৈনাক মণ্ডল, সুমনকুমার রায়রা জানাচ্ছেন, তাঁরা এই ছবিতে প্রত্যেকেই চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ।
কুনুস্তরিয়া এরিয়ার বাঁশড়া হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল উদ্ধার হওয়া খনি কর্মীদের চিকিৎসা করার জন্য । সিনেমার শুটিংও সেই বাঁশড়া হাসপাতালেই হয়েছে। অর্থাৎ ঐতিহাসিক ঘটনাক্রমের সঙ্গে নিজেদের যেন রিলেট করতে পেরেছেন এই খনি কর্মীরা । তাঁরা আরও জানান, প্রত্যেকেরই ফিল্মে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা প্রথমবার । কিন্তু তাঁরা সবাই উচ্ছ্বসিত । কবে ফিল্ম রিলিজ হবে এবং সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে তার অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই ।
ইসিএলের কুনুস্তরিয়া এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার অনিল কুমার সিনহা জানিয়েছেন "2019 সাল থেকেই চলচ্চিত্র নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা, চলচ্চিত্র স্ক্রিপ্ট তৈরি করার জন্য আমার সঙ্গে প্রচুর আলোচনা করা হয় । আমাদের দেওয়া তথ্যেই নির্মিত হয়েছে এই ছবি । আমার এরিয়ার খনি কর্মীরা অভিনয় করেছেন শুনে আমি নিজে চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য আরও উৎসাহিত ।"