আসানসোল, 30 সেপ্টেম্বর : স্বচ্ছতার প্রতীক মহাত্মা গান্ধি । দেশজুড়ে যে স্বচ্ছ ভারত অভিযান চলছে সেই অভিযানের মুখও গান্ধিজি । কারণ মহাত্মা গান্ধি প্রথম এদেশে স্বচ্ছ ভারত গড়ে তুলতে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন । আর গান্ধিজির স্বচ্ছতার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে আসানসোলের একটি স্কুলের নাম ৷
উষাগ্রাম বয়েজ় হাইস্কুল ৷ এই স্কুলের গ্রামীণ শৌচাগার নির্মাণের খবর পেয়ে গান্ধিজি একই মডেল অনুসরণ করেছিলেন নিজের সেবাগ্রাম আশ্রমে । তাঁর সেবাগ্রাম আশ্রমে উষাগ্রাম বিদ্যালয়ের মতো একটি শৌচাগার নির্মাণ করার জন্য তৎকালীন উষাগ্রাম বয়েজ় হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধি ।
উষাগ্রাম বয়েজ় হাইস্কুলের ইতিহাস গৌরবোজ্জ্বল । 1904 সালের 4 ফেব্রুয়ারি উইলিয়াম প্রাইস বায়ার্স এই স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । মেথডিস্ট এপিস্কপাল চার্চের মিশনারি ছিলেন তিনি । মিশনারি দ্বারা পরিচালিত এই স্কুলের জন্য জমি দান করেছিলেন তৎকালীন কাশীপুরের রাজা যুগলকিশোর লাল সিংদেও । স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই স্কুলের নামকরণ করেছিলেন । পশ্চিমবঙ্গে হয়ত উষাগ্রাম প্রথম কোনও স্কুল, যার নামে একটি অঞ্চলের নামকরণ হয়েছে । এই স্কুলেই রামকিঙ্কর বেইজ প্রথম চাকরি পান । পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরোধে তিনি শান্তিনিকেতনে যোগদান করেছিলেন । কিন্তু স্কুলের সবচেয়ে বড় গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস মহাত্মা গান্ধিকে ঘিরে ।
স্কুলের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, 1922 সালের পর থেকেই এই স্কুলে স্বর্ণযুগ শুরু হয় । ফ্রেড জি উইলিয়াম এই স্কুলের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির দায়িত্ব নিয়ে নিযুক্ত হন এবং শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষার প্রসারের জন্য স্কুলটিকে নতুনভাবে গড়ে তোলেন । তখনই স্কুলে তৈরি করা হয় গ্রামীণ শৌচাগার । সেই সময় পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা ছিল না । জলের পাইপ লাইন ছিল না । আর তাই শৌচাগার এবং স্কুলের অন্যান্য কাজে ব্যবহার করার জন্য তিনি একটি কুয়ো নির্মিত করেছিলেন । আজও উষাগ্রাম স্কুলে গেলে সেই কুয়োটি দেখা যায় এবং সেটি আজও ব্যবহার যোগ্য ।
সেই সময় গোটা জেলায় উষাগ্রাম বিদ্যালয়েই শুধুমাত্র শৌচাগার ছিল । সাধারণ মানুষের বাড়িতে তখন শৌচাগার ছিল না । পরে এই পথ অনুসরণ করে আসানসোল ও রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতেও শৌচাগার নির্মিত হয় । বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন মহাত্মা গান্ধি । আর তাই তিনি উইলিয়ামকে চিঠি লিখেছিলেন । 1941 সালের 16 অগাস্ট উইলিয়ামকে চিঠি লেখেন গান্ধি । চিঠিতে তিনি অনুরোধ করেন যে তাঁর সেবাগ্রাম আশ্রমের জন্য ওই একই পদ্ধতিতে যেন শৌচাগার নির্মাণ করে দেন উইলিয়াম । পরবর্তীকালে এই উষাগ্রাম স্কুলের শৌচাগার এবং সেফটি ট্যাঙ্কের মডেলেই সেবাগ্রাম আশ্রমে শৌচাগার নির্মিত হয় ।
গান্ধিজির সেই চিঠিটি বর্তমানে পাথরে খোদাই করে স্কুলে লাগানো আছে । স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে বর্তমান প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মোজ়েস প্রসাদ সবাই গর্বিত মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে স্কুলের এই যোগসূত্রের ইতিহাস নিয়ে । তবে আজও এই ইতিহাস অনেকের অজানা । স্কুলের শিক্ষকদের মতে এই ইতিহাস আরও বেশি করে জানা দরকার এবং গান্ধি, রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই স্কুলের রক্ষণাবেক্ষণে অবশ্যই আরও ভালো করে করা উচিত ।