আসানসোল, 2 অক্টোবর: স্বচ্ছতার অন্যতম অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধি আসানসোলের উষাগ্রাম বয়েজ স্কুল থেকে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দেওয়া ইতিহাস এবং স্কুলের দেওয়ালে খোদাই করে রাখা গান্ধিজীর চিঠি সেই দাবিই করে। আসানসোলের উষাগ্রাম বয়েজ স্কুলে তৈরি হয়েছিল সেপটিক ট্যাংক দেওয়া আধুনিক শৌচাগার। গান্ধিজী তা জানতে পেরে নিজের সচিবকে পাঠিয়েছিলেন তা চাক্ষুষ করতে। পরবর্তীকালে এই স্কুলের সেপটিক ট্যাংকের ফর্মুলাতেই গান্ধিজীর সেবাগ্রাম আশ্রমে তৈরি হয়েছিল আধুনিক শৌচাগার। 1941 সালে চিঠি দিয়ে উষাগ্রাম স্কুলের তৎকালীন প্রধানশিক্ষককে ধন্যবাদও জানান মহাত্মা গান্ধি।
ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া আসানসোল উষাগ্রাম স্কুলের ইতিহাস গৌরব উজ্জ্বল। 1904 সালে মিশনারি এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন স্যার উইলিয়াম প্রাইস বায়ার্স। স্কুলের ইতিহাস থেকে জানা যায় 1935 সালে স্কুলেই তৈরি হয়েছিল সেপটিক ট্যাংক দেওয়া আধুনিক শৌচাগার। তখন এই শৌচাগারের চল খুব একটা ছিল না। মহাত্মা গান্ধি ততদিনে সবরমতি আশ্রম ছেড়ে সেবাগ্রাম আশ্রমে থাকতে শুরু করেছেন। তাঁর কাছে খবর পৌঁছে গিয়েছিল আসানসোলের ঊষা গ্রাম স্কুলে সেপটিক ট্যাংক দেওয়া এরকম একটি আধুনিক শৌচাগারের কথা।
তিনি বিষয়টি জানতে পেরেই তাঁর ব্যক্তিগত সচিবকে তিনি পাঠিয়েছিলেন উষাগ্রাম স্কুলে বিষয়টি নিয়ে জানতে। মহাত্মা গান্ধির সচিব আসানসোল সাধারণ স্কুলে আসেন এবং এই আধুনিক সেপটিক ট্যাংকের ফর্মুলা তিনি এখান থেকে নিয়ে যান। আসানসোলের উষাগ্রাম স্কুলের ফর্মুলাতেই গান্ধিজীর সেবাগ্রাম আশ্রমে তৈরি হয় আধুনিক শৌচাগার। বলা চলে আসানসোলের এই স্কুল থেকে স্বচ্ছতার অন্যতম অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধি। পরবর্তীকালে প্রযুক্তিগত কিছু ত্রুটি দেখা যায় গান্ধিজীর সেবাগ্রাম আশ্রমের সেপটিক ট্যাংকে ৷ এরপর তিনি তখন ধন্যবাদ জানিয়ে 1941 সালে উষাগ্রাম স্কুলের প্রধান শিক্ষক উইলিয়াম প্রাইস বায়ার্সকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন ৷
সেই চিঠিতে তিনি উইলিয়ামকে সস্ত্রীক আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেবাগ্রাম আশ্রমে। উইলিয়াম সেখানে যান এবং সেপটিক ট্যাংকের প্রযুক্তিগত যে সমস্যা হয়েছিল তা তিনি সমাধান করেন। সেবাগ্রাম আশ্রমে সেই সেপটিক ট্যাংকের পাশে লেখা ছিল আসানসোল ঊষাগ্রাম স্কুলের নাম। স্কুলের দেওয়ালে এখনও জ্বলজ্বল করছে খোদাই করে রাখা গান্ধিজীর সেই চিঠি। এই চিঠি নিয়ে গর্বিত হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে পরিচালন কমিটি।
স্কুলের বর্তমান সম্পাদিকা সুশীলা মল্লিক বলেন, "আমাদের স্কুলের এই সেপটিক ট্যাংকের ফর্মুলা গিয়েছিল গান্ধিজীর আশ্রমে। তিনি তাঁর সচিবকে পাঠিয়েছিলেন আমাদের স্কুলে। এই গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসের কথা আমরা স্কুলের নথি থেকে জানতে পেরেছি।" স্কুলের বর্তমান টিচার ইনচার্জ সন্দীপ নস্কর বলেন, "আমরা গর্বিত যে বাপুর সঙ্গে আমাদের স্কুলের যোগসূত্র ছিল। এই স্কুলের ইতিহাস চিরকারই গৌরবজ্জ্বল। এই স্কুলে রামকিঙ্কর বেইজের মতো কিংবদন্তিও শিক্ষকতা করে গিয়েছেন।"
আরও পড়ুন: 'দুর্বলের রক্ষাই হিন্দুর ধর্ম,' দুই পাতায় হিন্দুত্ব নিয়ে 'মন কি বাত' রাহুলের