চুরুলিয়া (পশ্চিম বর্ধমান), 2 ডিসেম্বর: ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের পর এবার পদ্মভূষণ । কবি কাজী নজরুল ইসলামের পদ্মভূষণ নাকি লোপাট হয়ে গিয়েছে ! আর এমনই খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে সোশাল মিডিয়া থেকে নজরুল প্রেমীদের মধ্যে । বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কবি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছড়িয়েছে । কিন্তু কবির প্রাপ্ত আসল পদ্মভূষণ এবং জগৎতারিণী পদক কোথায় রয়েছে, তা কিন্তু কেউ জানাতে পারেননি ।
1960 সালে কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত সরকার পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করে । 1945 সালে তিনি পেয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পুরস্কার জগৎতারিণী পুরস্কার । নজরুল প্রেমীরা জানতেন পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার চুরুলিয়ায় নজরুল অ্যাকাডেমির সংগ্রহশালায় পদ্মভূষণ ও জগৎতারিণী পুরস্কার রাখা আছে । কিন্তু সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে যে চুরুলিয়ার সংগ্রহশালায় যে দু’টি পদক রাখা রয়েছে, সেই দু’টি পদক আসল নয় । ওই দু’টি পদক আসলে রেপ্লিকা বা নকল পদক । আসল পদক দু’টি তাহলে কোথায় গেল ? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর কারও কাছে নেই৷ আর এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই কবি পরিবারের মধ্যেও দ্বন্দ্ব লেগেছে । কিন্তু পদক কোথায়, কেউ জানেন না ।
আসানসোলের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী এবং অভিনেতা সঞ্জীবন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমি সোশাল মিডিয়ায় এটি প্রথম লিখেছি । সম্প্রতি আমি কোনও একজন নজরুল গবেষকের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে এই দু’টি পদক আসলে রেপ্লিকা । এবং এই বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত । নজরুল সংগ্রহশালায় যে দু’টি পদক রয়েছে, সেই দুটি পদ আসল পদক নয় । আমরা ভয় পাচ্ছি পদকগুলিকে কোথাও বেচে দেওয়া হল না তো, নাকি পাচার হয়ে গেল ?"
বর্তমানে নজরুল অ্যাকাডেমির সংগ্রহশালা কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ৷ কিন্তু এতদিন পর্যন্ত যাঁরা সংগ্রহশালা আগলে রেখেছিলেন, তাঁরা চুরুলিয়ায় কবির পরিবারের সদস্য । নজরুল অ্যাকাডেমির প্রাক্তন সম্পাদক তথা কবির ভ্রাতষ্পুত্র রেজাউল করিম বলেন, "বিষয়টি সত্যি । আমি যখন এই নজরুল অ্যাকাডেমির সম্পাদক ছিলাম, পদক দু’টি তখন অক্ষত ছিল । কিন্তু আমাকে সরিয়ে আমার ভাই কাজী মোজাহার হোসেন নজরুল অ্যাকাডেমির সম্পাদক হন । তারপরেই কবির পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী এবং তাঁর পুত্র অনির্বাণ এই দু’টি পদক এখান থেকে নিয়ে গিয়ে তাঁরা রেপ্লিকা বসিয়ে দিয়ে গিয়েছেন ।"
একই বক্তব্য রেজাউল করিমের কন্যা তথা কবির সম্পর্কে নাতনি সোনালী কাজীরও । তিনিও বলেন, "আমার নিজের চোখে দেখা এবং শোনা কল্যাণী কাজী এবং তাঁর পুত্র অনির্বাণ এই পদক নিয়ে গিয়েছেন এখান থেকে । আমরা খুব লজ্জিত মানুষজনকে এটা বলতে হয় যে এটা নকল পদক ।" প্রত্যেকেই অবশ্য এই পদক ফিরে পেতে আহ্বান জানিয়েছেন । যাতে আগামী দিনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এই পদক নিয়ে গবেষণা করতে পারেন ।
যদিও ফোনে বিষয়টি ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির কাছে শুনেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতি কাজী অনির্বাণ । তিনি বলেন, "আমার মা চলে যাওয়ার পর এই সব বিতর্ক কেন উঠছে ? আমার কাছে কোনও পদক নেই এবং আমি জানিও না কোথায় রয়েছে পদকগুলি ।"
চুরুলিয়ায় কাজী পরিবারের দাবি, পদক রয়েছে কাজী অনির্বাণের কাছে । কাজী অনির্বাণের দাবি, তাঁর কাছে কোনও পদক নেই । তাহলে প্রশ্ন উঠছে, পদকগুলি গেল কোথায় ? তবে কি নোবেল প্রাইজের মতো এবার কাজী নজরুল ইসলামের পদ্মভূষণ ও জগৎতারিণী পুরস্কারও লোপাট হয়ে গেল ?
আরও পড়ুন: