আসানসোল, 3 ডিসেম্বর: কমছে এইআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৷ গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে এই বিষয়টি পরিষ্কার । স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের দাবি, সচেতনতার কারণেই কমছে এইচআইভি সংক্রমণ ৷ আটের দশকের শেষ দিকে এইডসের প্রাদুর্ভাব ৷ তখন তো বটেই, এখনও এই মারণ রোগ নিয়ে মানুষের আতঙ্ক কমেনি ৷ এদিকে অসচেতনতার জন্য এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ৷ আর কেউ এতে আক্রান্ত হয়েছে শুনলেই সমাজে তাকে প্রায় একঘরে করে দেওয়া হত ৷
এখন একবিংশ শতাব্দীতে পরিস্থিতিটা কিছুটা হলেও বদলেছে ৷ বর্তমানে এইচআইভি পরিস্থিতি অনেকটা ভালোর দিকে গিয়েছে ৷ গত ক'বছরের পরিসংখ্যানে আসানসোল শহরে এইচআইভি আক্রান্তের (HIV Infected) সংখ্যা বেশ খানিকটা কমেছে ৷ পরীক্ষা বাড়লেও আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে ৷ পাশাপাশি মৃত্যুর হারও নিম্নগামী ৷ সঠিক সময়ে রোগ নির্ধারণ ও চিকিৎসা শুরু হওয়ায় অনেকে স্বাভাবিক জীবনে, কাজে ফিরছেন ৷
বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় ব্যস্ততম শহর আসানসোল ৷ এই শহরে শিল্পাঞ্চল ও খনি অঞ্চলে বিভিন্ন প্রদেশের মানুষজন আসেন চাকরি সূত্রে, ব্যবসায়িক সূত্রে ৷ পাশাপাশি দু'রাজ্যের সীমানায় বহু বছর ধরে গড়ে উঠেছে যৌনপল্লি লছিপুর এবং সিতারামপুর ৷ দু'টি রাজ্যেরই বহু মানুষের ভিড় জমায় এখানে ৷ তাই আসানসোল এইচআইভি সংক্রমণের একটা বড় করিডোর হয়ে বিপদ বাড়াচ্ছিল ৷ কিন্তু কয়েক বছর ধরে লাগাতার সচেতনতা, চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর্মী ও সমাজকর্মীদের নিরলস পরিশ্রমে এই আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে কমছে ৷
আরও পড়ুন: গাজিয়াবাদের ডাসনা সংশোধনাগারে এইডস আক্রান্ত 140 বন্দি !
তবে এই খবরে আত্মতুষ্টির জায়গা নেই ৷ আরও বেশি বেশি তথ্য সংগ্রহ, আরও বেশি সচেতনতা এবং বিশেষ করে যে সমস্ত কমিউনিটির মধ্যে থেকে এই রোগ এখনও পর্যন্ত ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে সেখানে বেশি বেশি পরিমাণ কাজ করতে হবে বলেই নিদান দিচ্ছেন স্বাস্থ্য এবং সমাজকর্মীরা ৷
2019 সালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নতুন এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 114 ৷ যার মধ্যে 6 জন গর্ভবতী মহিলা ৷ 2020-তে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা নেমে আসে 107 জনে ৷ 2021 সালে সেই সংখ্যা হয় 76 ৷ গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রেও সেই সংখ্যা গত দু'বছরে কমে 3 হয়েছে ৷
উল্লেখ্য 2000 সালে করোনা মহামারির সময় করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি এইচআইভি পরীক্ষা করা হয় ৷ বহু পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্য থেকে এখানে ফিরেছিলেন ৷ সঙ্গে হাসপাতালে প্রতিদিনই করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৷ অর্থাৎ এইচআইভি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও পূর্ববর্তী বছরগুলোতে যা পরীক্ষা হয়েছে, তার তুলনায় বেশি সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করা হয়েছে 2020-21 সালে ৷ সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে সংখ্যাটি যথেষ্ট নীচের দিকে নেমে এসেছে বলে স্বস্তি মিলেছে ৷
বর্তমানে জেলা হাসপাতালে কোনও প্রসূতি মহিলা প্রসবের জন্য গেলে প্রথমে তাঁর এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়, ফলে সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে প্রসূতিদের ক্ষেত্রেও এইচআইভি আক্রান্তের হার কমে আসছে ৷ সামগ্রিক ভাবে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা কমছে, এমনটাই দাবি করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা ৷
আরও পড়ুন: কলকাতার হাসপাতালে বিরল অস্ত্রোপচার, সেরে উঠলেন ভিনদেশের রোগী
কিন্তু কেন কমছে, কারণ কী ?
আসানসোল জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার তথা ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ সঞ্জীৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ভলান্টিয়ারি ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প, যেগুলি করা হয় সেগুলিতে প্রায় এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা আমরা পাচ্ছি না বললেই বলা যায় ৷ অর্থাৎ সচেতনতা একটা বিরাট বড় জায়গায় কাজ করছে ৷ আগে যৌনপল্লিতে অবাধ মেলামেশার সুযোগ ছিল ৷ বর্তমানে বিভিন্ন সমাজকর্মীরা সেখানে কাজ করছেন ৷ ফলে কন্ডোমের ব্যবহার অত্যাবশ্যক করা হয়েছে ৷ সংক্রমণের হার অনেকটাই কমে এসেছে ৷ নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় ৷ চিহ্নিত করে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ৷ তাদের সঠিক অর্থে চিকিৎসা শুরু হচ্ছে ৷ এতে আক্রান্তের দ্বারা অন্যের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় ৷ এভাবে নিয়মিত কাজ চলছে বলেই সংক্রমণ কমে আসছে ৷"
আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, "নিরাপদ রক্ত আদান-প্রদান নিশ্চিত করা, নিরাপদ সিরিঞ্জ ব্যবহার- এছাড়াও স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে দৈহিক বর্জ্যের ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ও অন্য পদ্ধতিতেও সর্বদা চলছে ৷ সচেতনতার কাজ চলছে সব ক্ষেত্রে ৷ তাই কমছে সংক্রমণ ৷ তবে সচেতনতার পাঠকে আরও তৃণমূল স্তরে নিয়ে যেতে হবে ৷"
আরও পড়ুন: ঐতিহ্যগত ওষুধেই লুকিয়ে আছে আফ্রিকার জটিল রোগের চাবিকাঠি, মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার