দুর্গাপুর, 9 ফেব্রুয়ারি: ভৌগোলিকভাবে একদিকে পশ্চিম বর্ধমান আর অন্যদিকে বাঁকুড়া জেলা। তার মধ্যবর্তী দামোদর নদের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বালুচর। আর বিগত কয়েকদশক ধরে সেই চরেই বেআইনি পোস্ত চাষের আড়ালে চলছে আফিম চাষ (Illegal Poppy Cultivation)। দামোদরের চরে মাইলের পর মাইলজুড়ে তাকালে দেখা যাচ্ছে সাদা ফুল আর সবুজ ফল। ভোর রাত থেকেই মুখে কাপড় বেঁধে নৌকা নিয়ে ঢুকে পড়ছে মাফিয়ারা। বিরাট এলাকায় চলছে পোস্ত চাষের রমরমা কারবার। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এই ছবি দেখার পর বেশ কয়েক বছর ধরেই সেন্ট্রাল নারকোটিক ডিপার্টমেন্ট এবং রাজ্য আবগারি দফতর নড়েচড়ে বসে।
গতবছর দামোদরের চরে 136 কোটি টাকা মূল্যের পোস্ত নষ্ট করে এই দুই দফতরের আধিকারিকরা। এবার আবার ব্যাপকভাবে দামোদরের চরে পোস্ত চাষ। যদিও আবগারি দফতরের কর্তার কথায় বাইরে থেকে আসছে এই পোস্ত চাষিরা। কিন্তু কান পাতলে শোনা যাচ্ছে দুর্গাপুর ও বাঁকুড়ার বেশকিছু প্রভাবশালী শাসক দলের নেতারা রয়েছেন এই বেআইনি পোস্ত চাষের আড়ালে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপির দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই।
এক সময় ওয়ারিয়ামানা, অঙ্গদপুর, রাতুরিয়া এই সমস্ত এলাকায় যারা বেআইনিভাবে বালির কারবার করত অর্থাৎ সেই সমস্ত কুখ্যাত মাফিয়ারাই এই বেআইনি পোস্ত চাষের নেপথ্যে ৷ বলা যায়, আফিম মাফিয়াদের এই পাকা ফলে মই দিল সেন্ট্রাল নারকোটিক্ দফতর এবং বাঁকুড়া জেলার আবগারি দফতর। লাগাতার কয়েকদিন ধরে অবৈধ পোস্ত চাষের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে সেন্ট্রাল নারকোটিক বিভাগ ও আবগারি দফতর।
আরও পড়ুন: দামোদরের চরে অবৈধ পোস্ত চাষ ! নষ্ট করল আবগারি দফতর
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে মেজিয়ার বানজোড়া এলাকার দামোদর নদীগর্ভে প্রায় 25 বিঘা অবৈধ পোস্ত চাষের জমিতে ট্রাক্টর চালিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয় (Excise Department Destroyed 25 Bigha Poppy Land)। আবগারি দফতর সূত্র ধরে যেটা জানা যাচ্ছে, প্রায় 350 বিঘা জমিজুড়ে লাগানো হয়েছে বেআইনি পোস্ত গাছ। এই গাছ লাগানো থেকে পাকা ফল থেকে আফিম বের করার কাজের জন্য দক্ষ কারিগরদের আনা হয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে। পার্শ্ববর্তী বীরভূম জেলা থেকে এসেছে এই আফিম চাষের দক্ষ লোকজন। তাদেরকে রাখা হয়েছে দামোদরের দুই পারের গোপন ডেরায়।
আবগারি দফতরের বাঁকুড়া জেলার সুপারিনটেনডেন্ট তুহিন নাগ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "গত বছর আমরা প্রায় 136 কোটি টাকা মূল্যের পোস্ত গাছ নষ্ট করেছি। যা শোনার পর বোঝাই যাচ্ছে এত টাকা লেনদেনের কারবারে যুক্ত শুধুমাত্র কয়েকজন সাধারণ মানুষ নন। এই কারবারের যুক্ত মাফিয়ারা কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছেন এই বেআইনি পোস্ত চাষের আড়ালে আফিম চাষ থেকে।" তুহিন নাগ আরও জানান, যারা এই পোস্ত চাষের নেপথ্যে যারা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাঁকুড়ায় অবৈধ পোস্ত চাষ রুখতে ড্রোনে নজরদারি
কিন্তু ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে দামোদরের তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা ৷ তাদের একজন বলেন, "তদন্তে কি আদৌ রাঘব বোয়ালদের নাম উঠে আসবে? নাকি, কয়েকজন পেটের দায়ে পোস্ত গাছ লাগানো কিংবা পরিচর্যা করার লোকজনকে গ্রেফতার করেই দেখানো হবে যে এরাই অপরাধী।" যদিও বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই জানান, অনেক হয়েছে এবার কিন্তু এই বেআইনি পোস্ত চাষের আড়ালেও যে কোটি কোটি টাকার কারবার এবং তার সঙ্গে যে শাসকদলের প্রভাবশালীদের যোগসাজশের বিষয়টি বিধানসভায় তিনি উত্থাপিত করবেন। শুধু তাই নয়, তিনি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে অভিযোগ জানাবেন।
তিনি আরও বলেন, "পোস্ত চাষের আড়ালে আফিম চাষ এবং তা থেকে যে কোটি কোটি টাকার কারবারের টাকা কোথায় যাচ্ছে তা নিয়েও কেন্দ্রীয় এজেন্সি দ্বারা তদন্তের দাবি জানাব। আমি ইতিমধ্যেই সমস্ত চিঠি তৈরি করেছি। আগামী শুক্রবার থেকেই আমি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে সেই চিঠি দেব। পুলিশ, স্থানীয় শাসকদলের নেতারা সকলেই যুক্ত রয়েছেন বলে বারবার এই একই ঘটনা ঘটছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রভাবশালীরা শাস্তি পাচ্ছেন ততক্ষণ দামোদরের চরে এই বেআইনি পোস্ত চাষ বন্ধ করা যাবে না।"
আরও পড়ুন: মালদাকে বেআইনি পোস্ত চাষমুক্ত রাখতে কড়া পদক্ষেপ প্রশাসনের