দুর্গাপুর, 14 সেপ্টেম্বর: রাষ্ট্রায়ত্ত ডিএসপি কারখানার সম্প্রসারণের জন্য অধিগৃহীত ফাঁকা জমিতে চলছিল প্রাচীর তৈরির কাজ ৷ সেই কাজ করতে গিয়েই স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন ডিএসপির আধিকারিকরা ৷ অস্থায়ী মঞ্চ উপড়ে ফেলল ক্ষুব্ধ জনতা ৷ ঘটনাস্থলে চলল সিআইএসএফের লাঠিচার্জ ৷ প্রতিবাদে রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ ক্ষিপ্ত এলাকাবাসীর । সিআইএসএফের লাঠিচার্জের জেরে অনেকে আহত হয়েছে বলে অভিযোগ । ঘটনাস্থলে এসেছে দুর্গাপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স ৷
জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য জমির প্রয়োজন । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও মিশ্র ইস্পাত কারখানা লাগোয়া কারখানার জন্য অধিগৃহীত ফাঁকা জমিতে দীর্ঘ প্রায় 50-60 বছর আগে থেকেই বসতি গড়ে ওঠে । কাদা রোড, মেইনগেট, তামলাবস্তি, পলাশডিহা, ভিড়িঙ্গি চাষিপাড়া, ওয়ারিয়া গেট-সহ আরও বেশ কিছু এলাকায় অধিগৃহীত ফাঁকা জমিতে দীর্ঘদিন বসবাসকারীদের নোটিশ জারি করে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষ । এরপরেই দফায় দফায় বিক্ষোভ শুরু হয় দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার নগর প্রশাসন ভবনের সামনে । শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক চাপানউতোরও ।
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া এর আগে পুনর্বাসন না দিয়ে উচ্ছেদ করা যাবে না, এইদাবিতে সরব হন । অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের নেতৃত্বে তৈরি হয় 'জমি বাঁচাও কমিটি'। শুরু হয় তীব্র আন্দোলন । এরই মাঝে বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার চিফ জেনারেল ম্যানেজার বিকাশ মানবতী এবং অন্যান্য আধিকারিকরা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা লাগোয়া তামলাবস্তি এলাকায় ফাঁকা জমিতে প্রাচার তৈরির জন্য নারকেল ফাটিয়ে উদ্বোধন করতে আসেন ৷ আর তখনই ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যায় । সিআইএসএফ বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মাঝে কোনওরকমে নারকেল ফাটিয়ে উদ্বোধন শেষ হয় ৷ এরপরেই উত্তেজিত জনতার ক্ষোভ গিয়ে আছড়ে পড়ে অস্থায়ী মঞ্চের উপর ৷ সেটিকে ভেঙ্গে দেয় তারা ।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তামলাবস্তি এলাকার বাসিন্দারা । সিআইএসএফ বাহিনীর সঙ্গে ওই এলাকার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাদের ধস্তাধস্তিও শুরু হয়ে যায় । ঘটনাস্থলে আসে দুর্গাপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী । কমব্যাট ফোর্সকেও মোতায়েন করা হয় এলাকায় । দফায় দফায় সিআইএসএফ ও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় উত্তেজিত জনতার । তারপরেই লাঠিচার্জ শুরু করে সিআইএসএফ । এতে আহত হন বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা । উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকেও লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে দেখা যায় । এরপরেই ঘটনাস্থলে দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য তথা তৃণমূল নেতা ধর্মেন্দ্র যাদব আসেন ৷ তাঁকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে উত্তেজিত জনতা ।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার উচ্ছেদ নোটিশের বিরোধিতা বিজেপি সাংসদ এসএস আহলুওয়ালিয়ার
এলকাবাসীর দাবি, এখানে কোনও রাজনীতি চলবে না । পরে ধর্মেন্দ্র যাদব সাংবাদিকদের সামনে জনতার দাবিকে মেনে নিয়ে জানান, এখানে রাজনীতি করতে কারও আসা যাবে না । এখানে আসতে হলে রাজনৈতিক পতাকা ছেড়ে আসতে হবে । স্থানীয় বাসিন্দা সুরেশ কুমার অভিযোগ করেন,"সামনেই 2024-এর ভোট ৷ তার জন্য আমাদেরকে নিয়ে রাজনীতি করতে এসছে সব দল ৷ আমরা আমাদের নিজেদের লড়াই লড়ব ডিএসপির বিরুদ্ধে । এখানে কোনও রাজনীতি আমরা করতে দেব না ।"