আসানসোল, 10 ফেব্রুয়ারি: সিকিমে ভারত-চিন সীমান্তে হরভজন সিংয়ের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। তিনি নাকি মৃত্যুর পরে আজও বর্ডারে দাঁড়িয়ে দেশরক্ষা করেন। ঠিক তেমনিভাবেই মারা যাওয়ার পরেও আসানসোল চেলিডাঙা অঞ্চলের মানুষদের যেন পাহারা দিয়ে রেখেছেন দেবাশিস ঘটক (Debasish Ghatak Still Alive In Asansol)। আসানসোল পৌরনিগমের প্রাক্তন এই কাউন্সিলর দেবাশিস ঘটকের (Debasish Ghatak) অকাল প্রয়াণ হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর পরেও তিনি থেকে গিয়েছেন মানুষের মনে। চেলিডাঙা অঞ্চলে একটি মূর্তি রয়েছে তাঁর এবং সেখানকার বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন সশরীরে না থাকলেও দেবাশিস ঘটক এই মূর্তিতেই জীবিত রয়েছেন। উৎসব আনন্দ তো বটেই, এই পৌরভোটেও ভীষণভাবে রয়েছেন তিনি।
আসানসোল পৌরনিগমের 50 নম্বর ওয়ার্ডই চেলিডাঙা অঞ্চল। কার্যত তৃণমূলের গড় বলেই পরিচিত। বাম আমলে স্থানীয় লোকেরাই দেবাশিস ঘটককে দাঁড় করিয়েছিলেন। মানুষের জন্য তাঁর সেবা, আপদ-বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া ছিল বিশেষত্ব ৷ সর্বোপরি এলাকার মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিল দেবাশিস ঘটকের। আর তাই সহজেই জিতেও যান তিনি। পরপর 3 বার কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। প্রথমে কংগ্রেস তারপর তৃণমূল। কিন্তু 2006 সালে দলীয় কর্মসূচিতেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে তাঁর অকাল প্রয়াণ হয়। গোটা আসানসোল সেদিন শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল চঞ্চল, উদ্যমী, তরুণ তুর্কি এই যুবকের জন্য। 2006 সালে আসানসোল পৌরনিগমের উপনির্বাচনে দেবাশিস ঘটকের ভাই অভিজিৎ ঘটক ওই আসনে জয়লাভ করেন। তারপর আরও দু'বার আসানসোল পৌরনিগমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়ে কাউন্সিলর হয়েছেন অভিজিৎ ঘটক। মেয়র পরিষদ এবং প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যও হয়েছেন তিনি। দেবাশিস ঘটকের দাদা মলয় ঘটক। রাজ্যের আইন ও পূর্তমন্ত্রী। এলাকাবাসীদের মতে, এই ঘটক পরিবার চেলিডাঙা অঞ্চলের মানুষদের জন্য আপনজনের মত দাঁড়িয়ে রয়েছেন আপদে-বিপদে।
স্থানীয় বাসিন্দা পিন্টু কর্মকার বলেন, "আমরা মনে করি দেবাশিস ঘটক আজও রয়ে গিয়েছেন। তাই, আমরা তাঁর মূর্তিকে শীতকালে টুপি পরানো, মাফলার দেওয়া, সোয়েটার পরানো থেকে শুরু করে গ্রীষ্মকালে দু'বার স্নান করানো, বিভিন্ন উৎসব আনন্দে তাঁকে খাওয়ানো এমনকি ছটপুজোর ঠেকুয়াও তাঁকে নিবেদন করা হয়। তিনি পাহারাদারের মতন চেলিডাঙা অঞ্চলে আজও আছেন এবং থাকবেন তিনি। ভোট প্রচারেও দেবাশিস ঘটক রয়েছেন আমাদের সঙ্গেই।" আরেক বাসিন্দা দেবন্দর সিং বেদি বলেন, "দেবাশিস ঘটক আমাদের কাছে ভগবান ছিলেন। যে কোনও সময় আপদে-বিপদে তিনি মানুষের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।" গত প্রায় 30 বছর ধরে এই 50 নম্বর ওয়ার্ডে ঘটক পরিবারের প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব সামলান আসানসোল আদালতের সরকারি আইনজীবী বুন্দেলাপ্রসাদ সিং। তিনি বলেন, "সেই সময় দেবাশিস ভোটে দাঁড়াতে চায়নি। আমরা সবাই মিলে জোর করে তাঁকে দাঁড় করিয়েছিলাম। অল্প খেটে ছিলাম। তাতেই জিতে গিয়েছিল। তারপর নিজেই ও দায়িত্ব সামলে নেয়। তারপর আরও দু'বার জিতেছিল। তাঁর মৃত্যুর পর অভিজিৎ ঘটক কাউন্সিলর হন এবং তিনিই এবারের প্রার্থী। এই ওয়ার্ডে কখনই ঘটক পরিবারের মানুষদের হারানো সম্ভব হয়নি, হবেও না।"
আসানসোল পৌরনিগমের মধ্যে সবচেয়ে নিশ্চিত আসন যদি বলা যায় তা হল 50 নম্বর ওয়ার্ড। বিরোধীরা প্রার্থী দিলেও সেখানে তেমন প্রচার নেই। নেই কোনও জেতার উদ্যোগ। আসলে প্রয়াত দেবাশিস ঘটক যে জয়ের ধারা শুরু করেছিলেন, সেই জয়ের ধারা আজও বহমান।