দুর্গাপুর, 13 জুন : শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল ৷ আর তার জেরেই দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি কারখানায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হল তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন INTTUC-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে৷ বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা তাঁকে কালো পতাকা দেখায় বলে অভিযোগ । ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ধরনায় বসেন বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল । এরপর কারখানার গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের অনুগামীদের বিরুদ্ধে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করে পুলিশ । দুর্গাপুর নগর নিগমের চার নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বন্দোপাধ্যায়কেও লাঠি দিয়ে মারতে দেখা যায় ।
শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের আজ কার হাতে থাকবে? এই প্রশ্নে লড়াই অব্যাহত। শুক্রবার সকালে দুর্গাপুরের কোকওভেন থানা এলাকার ডেয়ারি মোড়ে বেসরকারি গ্রাফাইট ইন্ডিয়া লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে মিছিল করে দেখা করতে যান বিশ্বনাথ পাড়িয়াল । এই কারখানায় এখনও INTTUC-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীদের হাতেই শ্রমিক সংগঠনের রাশ রয়েছে ।
কারখানায় ঠিকা শ্রমিক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে , স্বজনপোষণ হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল সদলবলে মিছিল করে কারখানার গেটের সামনে এসে উপস্থিত হন । সেই সময় বিশ্বনাথ বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা বিধায়ককে কালো পতাকা দেখান । উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে কারখানা সংলগ্ন এলাকায় । পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশবাহিনী সহ কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করতে হয় প্রশাসনকে । এরপর বেসরকারি কারখানা কর্তৃপক্ষ বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে কারখানায় ঢুকতে দেয়নি ।
এই নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ৷ তিনি জানান, ‘‘গ্রাফাইট ইন্ডিয়া লিমিটেডের নাম পরিবর্তিত হয়ে জামাই ইন্ডিয়া লিমিটেড হয়ে গেছে। কারণ এখানে অর্থের বিনিময়ে কর্মীনিয়োগ এবং স্বজনপোষণ চলছে। যারা এই দুর্নীতির সাথে জড়িত তারাই আজ কালো পতাকা দেখিয়েছে । এরা কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বা তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক হতে পারে না ।’’ বিশ্বনাথ পাড়িয়াল হুঁশিয়ারি দেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁকে কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হবে, ততক্ষণ এই আন্দোলন চলবে৷ এরপর কারখানায় ঢুকে ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ।
দুর্গাপুরে 2016 বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় হয়েছে শাসকদলের । তার একটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের অন্তর্দ্বন্দ্ব । সেই সময় দুর্গাপুরে শ্রমিক সংগঠন ভেঙে দেওয়া হয়েছিল । তারপরও শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের দ্বন্দ্ব মেটেনি । বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে INTTUC-র পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতি করা হয় । কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা সহ বহু কলকারখানায় প্রভাত চট্ট্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরা শ্রমিক সংগঠনের হাল ধরে রেখেছেন নিজেদের হেপাজতে । আর সেই শ্রমিক সংগঠনের রাশ কার হাতে থাকবে? তাই নিয়ে লড়াই বিশ্বনাথ বনাম প্রভাতের অনুগামীদের মধ্যে । লোকসভা নির্বাচনেও দুর্গাপুরে শাসকদলের পরাজয় ঘটে । তারপরও শ্রমিক সংগঠনের দখল নিয়ে চলছে নিজেদের মধ্যে মারামারি ।