আসানসোল, 2 জানুয়ারি: গন্ধ! খাবার থেকে শুরু ক'রে প্রসাধন। গন্ধ যে কোনও জিনিসের আলাদা পরিচয় তৈরি করে। বিশেষ বিশেষ স্থানের বিশেষ গন্ধ, ভাসিয়ে নিয়ে স্মৃতির পাতায়। শহরের দূষণ, যানবাহনের ডিজেলের গন্ধ আবার গ্রামের প্রান্তে জংলা গাছের গন্ধ দুই জীবনযাত্রার অন্য প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। অর্থাৎ শুধু গন্ধতেই একটা জায়গা চিনে ফেলতে পারেন অনেকে ৷ এবার শহর আসানসোলকে চেনাতে শহরের বিভিন্ন স্থানের গন্ধকে বোতলবন্দি করেছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পড়ুয়ারা। দেশের অন্যান্য কোথাও এই উদ্যোগ চোখে পড়েছে কি না, তা জানা না থাকলেও আসানসোলে এমন ঘটনা সত্যিই তাক লাগানোর মতো ৷ জানা নেই তবে আশ্চর্যতম হলেও এটাই সত্যি শহরের বিভিন্ন গন্ধকে বন্দী করা হয়েছে বোতলে।
কেন এই উদ্যোগ?
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা সংগ্রহশালার কিউরেটর শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ''কোভিডের সময়ে যখন আমরা স্বাদ- গন্ধ হারিয়েছিলাম, তখন গন্ধের তাৎপর্য ব্যাপকভাবে অনুভব করা গিয়েছিল ৷ গন্ধের সঙ্গে প্রচুর স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। শহরের বিভিন্ন স্থানের গন্ধ আমাদেরকে সেই স্থানে এক ঝটিকায় নিয়ে যেতে পারে। আর সেই ভাবনা থেকেই শহরে বিভিন্ন উপাদান সামগ্রী সংগ্রহ করি এবং সেখান থেকে আমাদের কেমিস্ট্রি বিভাগ গন্ধের নমুনা আমাদেরকে বিশেষ উপায়ে বোতলবন্দি করে দিয়েছে। আমরা সেই গন্ধ এখন ছাত্র-ছাত্রীদের নাকে দিলেই তাঁরা অচিরেই বলে দিতে পারে এটি আসানসোলের কোন জায়গার গন্ধ। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষে বসেই এক লহমায় চোখ বন্ধ করে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে সেই জায়গায়।"
কী কী রয়েছে এই গন্ধ গুলির মধ্যে?
ইস্কো কারখানার দিক থেকে ভেসে আসা কোলটারের গন্ধ রয়েছে যা ইন্ডাস্ট্রিয়াল বজ্র পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়াও রয়েছে আসানসোলের শহরে ঢুকতেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পচা গন্ধ ৷ তার পাশাপাশি রয়েছে আবার বিভিন্ন মন্দির-মসজিদের সুগন্ধ ৷ আবার আসানসোলের বাজারের আতর বাজারের বিশিষ্ট গন্ধও রয়েছে বোতনবন্দি অবস্থায়। আসানসোল মুন্সি বাজারের ভেতরে প্রাচীন মসলা দোকানগুলির পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় পাওয়া যায় সুন্দর মসলার গন্ধ। রয়েছে আরও বিভিন্ন সংগ্রহ।
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আপাতত আসানসোল দিয়ে এই যাত্রা শুরু হয়েছে। আগামিদিনে জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের গন্ধ যদি সংগ্রহ করা যায় তাহলে এক জায়গায় বোঝা যাবে সেটা কোন এলাকার গন্ধ। ছাত্রছাত্রীরাও এই নতুন ধরনের গবেষণায় বেশ উৎসাহিত এবং উদ্বুদ্ধ।
প্রসঙ্গত, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেতুবন্ধ সংগ্রহশালায় ইতিমধ্যেই প্রাচীন আসানসোল শহরের নানান জিনিসপত্র ঠাঁই পেয়েছে। ছবি ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রাচীন শহরের হেরিটেজ ভবন, নানা জিনিসপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয়েছে এই সংগ্রহশালায়। এবার শহরকে ভালোবেসে আসানসোলের বিশেষ বিশেষ স্থানের বিশেষ গন্ধ বোতলবন্দি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে।
আরও পড়ুন
1. আজ থেকে রাজ্যে টানা চারদিন আইনি বিয়ে বন্ধ, জানেন কারণ কী ?
2. তিনবছরেই আশ্চর্য স্মৃতি, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে নাম ঋদ্ধিতার
3. কোলিয়ারির 250 মিলিয়ন বছরের পুরনো জীবাশ্ম সংগৃহিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে