দুর্গাপুর, 14 ডিসেম্বর: বেআইনি কয়লা কারবারের কিংপিন অনুপ মাজি ওরফে লালার ঘনিষ্ঠদের বাড়ি জোরদার তল্লাশি সিবিআইয়ের ৷ ইতিমধ্যেই লালা ঘনিষ্ঠ স্নেহাশিস তালুকদারকে আটক করা হয়েছে । কলকাতা-সহ মোট 12 জায়গায় তল্লাশি সিবিআইয়ের । মালদার রতুয়া, বেনাচিতি, দুর্গাপুর, আসানসোল সহ কলকাতার ভবানীপুর এলাকায় চালানো হচ্ছে ম্যারাথন তল্লাশি অভিযান। আটক লালা ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী স্নেহাশিস তালুকদার ও আরও এক সিআইএসএফের অবসারপ্রাপ্ত কনস্টেবল ।
শুধু স্নেহাশিস নয়, সিআইএসএফের অপর অবসারপ্রাপ্ত কনস্টেবেল শ্যামল সিং ও ব্যবসায়ী সৌরভ আচার্যের বাড়িতেও চলে সিবিআই তল্লাশি। মূলত কয়লা পাচারের মামলার তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পারে যে সিআইসিএফ এর কনস্টেবল যারা অবসরপ্রাপ্ত তারা সরাসরি ভাবে কয়লা মাফিয়া অনুপ মাজির সাথে যুক্ত ছিল।
অবসরপ্রাপ্ত হলেও তাঁরা একইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আসানসোলে নিযুক্ত ছিলেন। শ্যামল সিংয়ের বাড়ি আদতে মালদার রতুয়ায়। আগামিকাল তাঁর ভাইজি এর বিবাহ। আর সেই বাড়িতেই এই মুহূর্তে সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন। সবার মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও কলকাতায় তাদের অবাধ আনাগোনা ছিল বলে খবর। কলকাতার যে সকল অফিসে তাদের অবাধ যাতায়াত ছিল সেই সকল অফিসে ইতিমধ্যেই তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে সিবিআই।
এই দুই অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবল দীর্ঘদিন ধরে আসানসোল রানিগঞ্জে একসঙ্গে কাজ করেছেন। এর ফলে অনুপ মাজির সঙ্গে তাদের টাকার লেনদেনের হিসেব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। এর আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বাঁকুড়ার এক সার্কেল ইন্সপেক্টর কে গ্রেফতার করেছিল। মূলত ওই সার্কেল ইন্সপেক্টর এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যখন তিনি বাঁকুড়ায় কর্মরত অবস্থায় ছিলেন সেই সময় অনুপ মাঝির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন । সেখান থেকে মোটা টাকা বিনিময় জাতীয় সড়ক দিয়ে ট্রাকভর্তি বেআইনি কয়লা পুলিশের চেকপোস্ট থেকে ছেড়ে দিতেন।
অন্যদিকে এদিন ব্যবসায়ী সৌরভ আচার্যের ভাড়া বাড়িতে অভিযান চালায় সিবিআই ৷ বৃহস্পতিবার সকাল 7টা নাগাদ আচার্য দুর্গাপুরের বেনাচিতি ভিড়িঙ্গী আনন্দনগর এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন ৷ তাঁর সঙ্গে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও সেখানে থাকেন ৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, 2018 সাল থেকে এই বাড়িতে ভাড়া থাকছেন সৌরভ আচার্য ৷ রঞ্জন সাহা ওই বাড়ির মালিক ৷ এলাকায় সৌরভ নিজেকে পরিবহণ ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছেন ৷ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ সিবিআই আধিকারিকরা ভাড়া বাড়িতে পৌঁছন ৷
রঞ্জনবাবুর স্ত্রী অনুশ্রী সাহা বলেন, "সৌরভ আচার্য আমাদের বাড়িতে 2018 সাল থেকে ভাড়া আছেন ৷ তাঁর স্ত্রী সদ্য সন্তানের জন্ম দেওয়ার কারণে এখানে নেই ৷ সৌরভ এবং তাঁর মা এই বাড়িতেই থাকেন ৷" বাড়িতে সিবিআই আধিকারিকদের আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আজ কারা এসেছে, তা আমরা কিছুই জানি না ৷ সৌরভ পরিবহণ ব্যবসায়ী বলেই আমাদের কাছে জানিয়েছিল ৷ আমরা এর থেকে বেশি কিছুই জানি না ৷"
এখানে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের প্রশ্ন, তাহলে কি বেআইনি কয়লা পাচারের ক্ষেত্রে সৌরভের পরিবহণকে কাজে লাগানো হত ? সিবিআই-এর পাঁচজন আধিকারিক বৃহস্পতিবার সকাল থেকে 5 ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ৷ বেলা প্রায় বারোটা নাগাদ সিবিআইয়ের আধিকারিকরা ওই বাড়ি থেকে বের হন ৷ তাঁরা বেশ কিছু নথিও জোগাড় করেছেন বলে জানা গিয়েছে ৷ কয়লা পাচার কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত অনুপ মাজি ৷ এর আগে তাকে সিবিআই ও ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করে ৷
আরও পড়ুন: