দুর্গাপুর, 9 সেপ্টেম্বর: একালের রবীন্দ্রনাথের পাঠশালা । তবে তা বীরভূমের রাঙামাটি শান্তিনিকেতনে নয় ৷ ইট-কাঠ-লোহার দুর্গাপুরে । তাঁর নামও বিশ্বকবির নামেই ৷ দুর্গারোগ্য ক্যানসার রোগে আক্রান্ত মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ চন্দ্র ৷ দিনে দিনে গলার স্বর হারিয়ে যাচ্ছে ৷ জড়িয়ে যাচ্ছে কথা ৷ তাও পড়িয়ে যাচ্ছেন দুর্গাপুরের রবীন্দ্রনাথ চন্দ্র (Cancer patient teacher teaches local children in Durgapur Paschim Bardhaman) ।
মাত্র 45 বছর বয়স হলেও রবীন্দ্রনাথবাবুকে দেখলে অনেক বেশি বয়সের মনে হয় ৷ তার জন্য দায়ী ক্যানসার ৷ কবিগুরুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মাত্র 25 বছর বয়স থেকে তিনি বিনা পয়সার পাঠশালা খুলে বসেছেন ৷ পোশাক বলতে সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি । দুর্গাপুরের সগড়ভাঙ্গা এলাকার কয়েকশো পড়ুয়াকে প্রতিদিন পুরনো একটি বাইকে বাড়ি থেকে পাঠশালায় নিয়ে আসেন ৷ এই পাঠশালা তাঁর বাড়ি ৷ পাঠ শেষে ফের বাড়িতে পৌঁছে দেন তিনিই ।
আরও পড়ুন: খড়কুটোর ঘরে শুধুই ভোট চাওয়া, প্রত্যয়ের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠার স্বপ্নে বুঁদ বাচ্চারা
মাস্টারমশাইকে দেখলে ছুটে আসে পড়ুয়ারা । পাঠশালায় লেখাপড়ার সঙ্গে বাড়তি পাওনা ক্যান্টিন । 5 বছর আগে রবীন্দ্রনাথবাবু জানতে পারেন তাঁর মুখে বাসা বেঁধেছে কর্কট রোগ । দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েও পড়ানো বন্ধ করার কথা মনে আসেনি, জোর হারিয়ে ফেলেননি । কখনও যদি বা মন ভেঙেছে, তাও নতুন করে পড়ুয়াদের নিয়েই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছেন ।
একসময় পাড়ার কয়েকজন খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে শুরু হয়েছিল ছোট পাঠশালা ৷ আজ সেখানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা 100 ছাড়িয়েছে ৷ মাস্টামশাইয়ের গলা অন্যদের মতো স্বাভাবিক নয়, সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন না। তবু শোনা যায় ঘরভর্তি পড়ুয়াদের আওয়াজ । অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সাহায্য করতে এলাকার অনেকেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন । পাঠশালায় যোগ দিয়েছেন এলাকার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা । শিল্পাঞ্চলের বুকে রবীন্দ্রনাথ চন্দ্রের গুরুকুলে ভবিষ্যতের আলো দেখছে আগামী প্রজন্ম ।
আরও পড়ুন: রোদ-বৃষ্টির মধ্যে চলছে পড়াশোনা; আবেদন করেও সংস্কার হয়নি বোলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের