আসানসোল, 12 জুলাই : চেন্নাই থেকে ট্রেনে করে ত্রিপুরায় নিজের বাড়ি ফিরছিলেন । কিন্তু সহযাত্রীদের অপবাদ সহ্য করতে পারেননি । গোটা কামরার রেলযাত্রীরা তখন তাকে কোরোনা আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করেছে । ভয় লাগতে শুরু করে তাঁর । রেল যাত্রীরা এমন আচরণ করছিল যেন তাকে রেলের কামরা থেকে ফেলে দেবে । শেষে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেয় । অন্য একটি মালগাড়ি তার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর আজ ত্রিপুরায় নিজের বাড়িতে ফিরে যায়।
ত্রিপুরার বাসিন্দা রতন দে কর্মসূত্রে চেন্নাইয়ে থাকতেন । 19 মার্চ ট্রেনে চেন্নাই থেকে ফিরছিলেন । উদ্দেশ্য ছিল ত্রিপুরায় বাড়িতে ফেরার । কিন্তু রেলের কামরায় সাময়িক অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য যাত্রীরা তাঁকে কোরোনা আক্রান্ত বলে অপবাদ দিতে থাকে । এক সময় গোটা কামরার রেলযাত্রীরা তাঁকে ট্রেন থেকে নেমে যেতে বলে । এবং ট্রেন থেকে না নামলে তাকে কার্যত ফেলে দেওয়ার উপক্রম করে।
রতন দে জানান, RPF-এর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন তিনি । কিন্তু কোনও সহায়তা মেলেনি। এরপর চলন্ত ট্রেন থেকে আসানসোল স্টেশনের সামনে ঝাঁপ দেন । উলটোদিক থেকে একটি মালগাড়ি আসছিল । সেই মালগাড়িতে তার দুটি পা কেটে যায় । আশঙ্কাজনক অবস্থায় RPF আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভরতি করে । কিন্তু এত রক্তক্ষরণ হয় যে তাকে বাঁচানো যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল চিকিৎসকদের । এরই মাঝে 23 মার্চ থেকে পড়ে যায় লকডাউন। অন্যান্য নার্সিংহোম হাসপাতালগুলিতে অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য জটিল চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায় । কিন্তু আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক অনুরাগ দাস এই কোভিড পরিস্থিতিতেও অস্ত্রোপচার করেন ও ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলেন । বেশ কিছুদিন পর জ্ঞান আসে রতনবাবুর এবং তার বাড়ির ঠিকানা জানান । আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকেই ত্রিপুরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং পরিবারের লোকজনদের খবর দেওয়া হয় । কিন্তু লকডাউনের কারণে তাঁরা আসতে পারেননি ।
আজ ত্রিপুরা থেকে লরি চালিয়ে রতন বাবুর ভাইপো আসেন । তিনি রতন দে কে ফিরিয়ে নিয়ে যান । তিনি জানান "এম্বুলেন্সে আসানসোল থেকে কাকাকে বাড়ি নিয়ে যেতে প্রায় 60 হাজার টাকা ভাড়া দিতে হত । সেই টাকা দিতে পারব না আমরা। তাই লরিতেই কাকাকে নিয়ে যাব ।" রানীগঞ্জের সামনে লরি দাঁড় করিয়ে তিনি আসানসোল জেলা হাসপাতালে আসেন। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে রতনকে নিয়ে দুপুরে জেলা হাসপাতাল থেকে এম্বুলেন্সে রানীগঞ্জ পৌঁছান। তারপর লরিতে কাকাকে নিয়ে তিনি ত্রিপুরা উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
দুটি পা খুইয়ে আজ বাড়ি ফিরছেন রতন দে। কিন্তু তবু তার আনন্দ রয়েছে কারণ জীবন ফিরে পেয়েছেন। লড়াই আরও কঠিন কিন্তু আগামীদিনে বাঁচতে চান রতন দে ।