আসানসোল, 4 নভেম্বর: যাত্রা শিল্প নিয়ে গেল গেল রব উঠেছে বেশ কয়েকবছর। এখন আর সেইভাবে ম্যারাপ বেঁধে টিকিট কেটে কলকাতার নামী যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয় না শিল্পাঞ্চলে। আগে আসানসোল, রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চলে রাত জেগে যাত্রার আসর চলত। সেসব এখন ছায়াছবি। কিন্তু যাত্রা শিল্পের এই দুর্দিনে ব্যতিক্রমী ছবি কুলটির মিঠানী গ্রামে। প্রায় 75 বছর ধরে এখানে গ্রামের নিজেদের দলে অ্যামেচার যাত্রাপালা এখনও বিরাটভাবে জনপ্রিয়। যা হার মানায় কলকাতার দলের যাত্রাপালাকেও। প্যান্ডেলে তিলধারণের জায়গা থাকে না ৷ তবু কোনও পেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রী নয়, গ্রামের যুবক-যুবতী, গৃহবধূরাই যাত্রামঞ্চে মাত করেন অভিনয়ে।
গ্রামের প্রবীণ মানুষদের কাছে জানা গেল, 1936 সালে থিয়েটার শুরু হয়েছিল কুলটির মিঠানী গ্রামে। যদিও যাত্রা শুরু হয় স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে। পাঁচের দশকে মিঠানীর যাত্রার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তৎকালীন অবিভক্ত বর্ধমান জেলায়। গ্রামে একাধিক যাত্রার দল গড়ে ওঠে। একদিকে সামাজিক যাত্রাপালা, অন্যদিকে বামপন্থী আন্দোলনের কথাও উঠে আসে স্বরচিত যাত্রা থিয়েটারে। বর্তমানে গণনাট্য সংঘের শাখা থিয়েটার গোষ্ঠী রয়েছে মিঠানীতে। রয়েছে পৃথক যাত্রা দল। যাত্রা উৎসব এবং থিয়েটার উৎসব দু'টিই অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রামের মধ্যবয়স্ক থেকে শুরু করে যুবকরা যেমন এই যাত্রা এবং থিয়েটারের অভিনয় করছেন, তেমনি যাত্রাপালার ক্ষেত্রে দেখা যায় গ্রামের যাত্রাদলগুলোতে অভিনয়ের জন্য মহিলাদের ভাড়া করে নিয়ে আসা হত। সেটাও ব্যতিক্রম মিঠানীতে। গ্রামের মেয়ে, গৃহবধূরায় মঞ্চে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন। আর তা নিয়ে কোনও বিতর্ক হয়নি কোনওদিন।
মিঠানী গ্রামের মেয়ে তথা যাত্রার অভিনেত্রী মুনমুন চট্টরাজ বলেন, "আমাদের গ্রাম চিরকালই একটু প্রগতিশীল ভাবনা ভাবে। আর সেই কারণে মেয়েরা চার দেওয়ালের মধ্যে শুধু বন্দি নয়। তারা যেমন চাকরি করে অন্যান্য পেশার সঙ্গে যুক্ত, তেমনি তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে অভিনয় করে পুরুষদের সঙ্গে একই দাপটে এবং আমাদের প্রত্যেকেরই বাড়ির সেটা সমর্থন রয়েছে।"
চারদিন ধরে মিঠানীতে যাত্রা উৎসব চলছে এবং এই যাত্রা উৎসবে শুধুমাত্র মিঠানী গ্রাম নয় পাশাপাশি গ্রামের মানুষজনকে উৎসাহিত করতে তাদের যাত্রার দলকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মিঠানী যাত্রা সংস্থার পক্ষ থেকে দূর্বাদল চট্টোপাধ্যায়-সূর্য চক্রবর্তীরা বলেন, "কলকাতার যাত্রা দলের চেয়েও গ্রামের যাত্রা দেখার জনপ্রিয়তা এখনও অনেক বেশি। সেজন্য মাঠ কানায়-কানায় ভরতি হয়ে যায়। পাশাপাশি অন্যান্য গ্রামের যাত্রা দলগুলোকেও আমরা সুযোগ দিই আমাদের এই যাত্রা উৎসবে। যাতে এই গ্রামীণ যাত্রার প্রসার আরও বাড়তে থাকে।"
আরও পড়ুন: ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়, খুদেদের নিয়ে বালকা কাবড় যাত্রা ঝাড়গ্রামে